পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Xbrbー রবীন্দ্র-রচনাবলী V) এইবার কন্যাপক্ষের কথা । ', হরনগরের চাটুজ্যেদের অবস্থা এখন ভালো নয়। ঐশ্বর্ষের বাধ ভাঙছে। ছয়-আনি শরিকর বিষয় ভাগ করে বেরিয়ে গেল, এখন তারা বাইরে থেকে লাঠি হাতে দশ-আনির সীমানা খাবলে বেড়াচ্ছে। তা ছাড়া রাধাকাস্ত জীউর সেবায়তি অধিকারে দশে-ছয়ে যতই সুক্ষ্মভাবে ভাগ করবার চেষ্টা চলছে, ততই তার শস্য-অংশ স্থলভাবে উকিল-মোক্তারের আঙিনায় নয়-ছয় হয়ে ছড়িয়ে পড়ল, আমলারাও বঞ্চিত হল না । তুরনগরের সে প্রতাপ নেই– আয় নেই, ব্যয় বেড়েছে চতুগুণ। শতকরা ন-টাকা হারে স্বদের ন-পা-ওয়াল মাকড়সা জমিদারির চার দিকে জাল জড়িয়ে চলেছে। পরিবারে দুই ভাই, পাচ বোন। কন্যাধিক্য-অপরাধের জরিমানা এখনও শোধ হয় নি। কর্তা থাকতেই চার বোনের বিয়ে হয়ে গেল কুলীনের ঘরে । এদের ধনের বহরটুকু হাল আমলের, খ্যাতিটা সাবেক আমলের। জামাইদের পণ দিতে হল কৌলীন্যের মোট দামে ও ফাকা খ্যাতির লম্বা মাপে । এই বাবদেই নপার্সেণ্টের সুত্রে গাথা দেনার ফাসে বারো পার্সেন্টের গ্রন্থি পড়ল। ছোটে৷ ভাই মাথা ঝগড়া দিয়ে উঠে বললে, বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টার হয়ে আসি, রোজগার না করলে চলবে না। সে গেল বিলেতে, বড়ো ভাই বিপ্রদাসের ঘাড়ে পড়ল সংসারের ভার। 蠟 * এই সময়টাতে পূর্বোক্ত ঘোষাল ও চাটুজ্যেদের ভাগ্যের ঘুড়িতে পরস্পরের লখে । লথে আর-একবার বেধে গেল। ইতিহাসটা বলি । বড়োবাজারের তনম্বকদাস হালওয়াইদের কাছে এদের একট। মোট অঙ্কের দেন। নিয়মিত স্বদ দিয়ে আসছে, কোনো কথা ওঠে নি। এমন সময়ে পুজোর ছুটি পেয়ে বিপ্রদাসের সহপাঠী অমূল্যধন এল আত্মীয়তা দেখাতে। সে হল বড়ো অ্যাটর্নি-আপিসের আর্টিকেলড্র হেডক্লার্ক। এই চশমা-পরা যুবকটি মুরনগরের অবস্থাটা আড়চোখে দেখে নিলে। সেও কলকাতায় ফিরল আর তনম্বকদাসও টাকা ফেরত চেয়ে বসল ; বললে, নতুন চিনির কারবার খুলেছে, টাকার জরুরি দরকার । বিপ্রদাস মাথায় হাত দিয়ে পড়ল । সেই সংকটকালেই চাটুজ্যে ও ঘোষাল এই দুই নামে দ্বিতীয়বার ঘটল দ্বন্দ্বসমাস। তার পূর্বেই সরকারবাহাদুরের কাছ থেকে মধুসূদন রাজখেতাব পেয়েছে।