পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

See রবীন্দ্র-রচনাবলী বলে, “কুমু, তুই নিজেই তো আমাদের সৌভাগ্য— তোকে না পেলে বাড়িতে শ্ৰী থাকত কোথায় ?” কুমুদিনী ঘরে পড়াশুনো করেছে। বাইরের পরিচয় নেই বললেই হয়। পুরোনো নতুন দুই কালের আলো-আঁধারে তার বাস। তার জগংটা আবছায়া-- সেখানে রাজত্ব করে সিদ্ধেশ্বরী, গন্ধেশ্বরী, ঘেটু, ষষ্ঠী ; সেখানে বিশেষ দিনে চন্দ্র দেখতে নেই ; শাখ বাজিয়ে গ্রহণের কুদৃষ্টিকে তাড়াতে হয়, অম্বুবাচীতে সেখানে দুধ খেলে সাপের ভয় ঘোচে ; মন্ত্র পড়ে, পাঠা মানত করে, স্থপুরি আলো-চাল ও পাচ পয়সার সিন্নি মেনে, তাগাতাবিজ প’রে, সে জগতের শুভ-অশুভের সঙ্গে কণরবার ; স্বস্ত্যয়নের জোরে ভাগ্য-সংশোধনের আশা— সে অাশা হাজারবার ব্যর্থ হয়। প্রত্যক্ষ দেখা যায়, অনেক সময়েই শুভলগ্নের শাখায় শুভফল ফলে না, তবু বাস্তবের শক্তি নেই প্রমাণের দ্বারা স্বপ্নের মোহ কাটাতে পারে। স্বপ্নের জগতে বিচার চলে না, একমাত্র চলে মেনে-চলা। এ জগতে দৈবের ক্ষেত্রে যুক্তির মুসংগতি, বুদ্ধির কর্তৃত্ব ভালোমন্দর নিত্যতত্ত্ব নেই বলেই কুমুদিনীর মুখে এমন একটা করুণ। ও জানে, বিনা অপরাধেই ও লাঞ্ছিত । অণট বছর হল সেই লাঞ্ছনাকে একান্ত সে নিজের বলেই গ্রহণ করেছিল— সে তার পিতার মৃত্যু নিয়ে। 8 পুরোনো ধনী-ঘরে পুরাতন কাল যে দুর্গে বাস করে তার পাক গাথুনি। অনেক দেউড়ি পার হয়ে তবে নতুন কালকে সেখানে ঢুকতে হয়। সেখানে যারা থাকে নতুন যুগে এসে পৌছোতে তাদের বিস্তর লেট হয়ে যায়। বিপ্রদাসের বাপ মুকুন্দলালও ধাবমান নতুন যুগকে ধরতে পারেন নি। দীর্ঘ তার গৌরবর্ণ দেহ, বাবরি-কাটা চুল, বড়ে বড়ো টান চোখে অপ্রতিহত প্রভূত্বের দৃষ্টি। ভারী গলায় যখন হাক পাড়েন, অনুচর-পরিচরদের বুক থর থর করে কেঁপে ওঠে। যদিও পালোয়ান রেখে নিয়মিত কুস্তি করা তার অভ্যাস, গায়ে শক্তিও কম নয়, তবু মুকুমার শরীরে শ্রমের চিহ্ন নেই। পরনে চুনট-করা ফুরফুরে মসলিনের জামা, ফরাসডাঙা বা ঢাকাই ধুতির বহুযত্নবিন্যস্ত কোচ ভূলুষ্ঠিত, কর্তার আসন্ন আগমনের বাতাস ইস্তাম্বুল-আতরের স্বগন্ধবার্তা বহন করে। পানের সোনার বাটা হাতে খানসাম পশ্চাদবর্তী, দ্বারের কাছে সর্বদা হাজির তকমা-পরা আরদালি । সদর-দরজায় বৃদ্ধ চন্দ্রভান জমাদার তামাক মাখা ও সিদ্ধি কোটার অবকাশে বেঞ্চে