পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉ぬ○ রবীন্দ্র-রচনাবলী "কেন, ওর রাগ কিসের? এতই কী দোষ করেছি, তুই বল মা ।” “কোনো দোষ কর নি বাবা। একটু ঘুমোও।” “বিন্দে দূতী ? সেই যে মধু অধিকারী সাজত। মিছে কর কেন নিন্দে, ওগো বিন্দে শ্ৰীগোবিন্দে– ” চোখ বুজে গুন গুন করে গাইতে লাগলেন। “কার বাশি ঐ বাজে বৃন্দাবনে। সই লো সই, ঘরে আমি রইব কেমনে । রাধু, ব্র্যাণ্ডি লে আও।” কুমুদিনী বাবার মুখের দিকে ঝুকে পড়ে বলে, “বাবা, ও কী বলছ ?” মুকুন্দলাল চোখ চেয়ে তাকিয়েই জিভ কেটে চুপ করেন। বুদ্ধি যখন অত্যন্ত বেঠিক তখনও এ কথা ভোলেন নি যে, কুমুদিনীর সামনে মদ চলতে পারে না । একটু পরে আবার গান ধরলেন, “শু্যামের বঁাশি কাড়তে হবে, নইলে আমায় এ বৃন্দাবন ছাড়তে হবে ।” এই এলোমেলে৷ গানের টুকরোগুলো শুনে কুমুর বুক ফেটে যায়— মায়ের উপর রাগ করে, বাবার পায়ের তলায় মাথা রাখে যেন মায়ের হয়ে মাপ-চাওয়া । মুকুন্দ হঠাৎ ডেকে উঠলেন, “দেওয়ানজি ।” দেওয়ানজি আসতে তাকে বললেন, “ওই যেন ঠক্ ঠক্‌ শুনতে পাচ্ছি।” দেওয়ানজি বললেন, “বাতাসে দরজ নাড়া দিচ্ছে ।” “বুড়ে এসেছে, সেই বৃন্দাবনচন্দ্ৰ— টাক মাথায়, লাঠি হাতে, চেলির চাদর কাধে । দেখে এসে তো। কেবলই ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্‌ করছে। লাঠি, না খড়ম ?” রক্তবমন কিছুক্ষণ শাস্ত ছিল । তিনটে রাত্রে আবার আরম্ভ হল। মুকুন্দলাল বিছানার চারি দিকে হাত বুলিয়ে জড়িতস্বরে বললেন, "বড়োবউ, ঘর যে অন্ধকার ! এখনও আলো জালবে না ?” W. বজরা থেকে ফিরে আসবার পর মুকুন্দলাল এই প্রথম স্ত্রীকে সম্ভাষণ করলেন — আর এই শেষ । বৃন্দাবন থেকে ফিরে এসে নন্দরানী বাড়ির দরজার কাছে মুছিত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন। তাকে ধরাধরি করে বিছানায় এনে শোয়াল । সংসারে কিছুই তার