পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ »>ዓ আর রুচল না। চোখের জল একেবারে শুকিয়ে গেল। ছেলেমেয়েদের মধ্যেও সাস্তুনা নেই। গুরু এসে শাস্ত্রের শ্লোক আওড়ালেন, মুখ ফিরিয়ে রইলেন। হাতের লোহা খুললেন না— বললেন, “আমার হাত দেখে বলেছিল আমার এয়োত ক্ষয় হবে না। সে কি মিথ্যে হতে পারে ?” + দূরসম্পর্কের ক্ষেমা-ঠাকুরবি আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন, “যা হবার তা তো হয়েছে; এখন ঘরের দিকে তাকাও ৷ কর্তা যে যাবার সময় বলে গেছেন, বড়োবউ ঘরে কি আলো জালবে না ?” নন্দরানী বিছানা থেকে উঠে বসে দূরের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যাব, আলো জালতে যাব। এবার আর দেরি হবে না।” বলে তার পাণ্ডুবর্ণ শীর্ণ মুখ উজ্জল হয়ে উঠল, যেন হাতে প্রদীপ নিয়ে এখনই যাত্রা করে চলেছেন । স্বর্য গেছেন উত্তরায়ণে ; মাঘ মাস এল, শুক্ল চতুর্দশী। নন্দরানী কপালে মোটা করে সি দুর পরলেন, গায়ে জড়িয়ে নিলেন লাল বেনারসি শাড়ি। সংসারের দিকে না তাকিয়ে মুখে হাসি নিয়ে চলে গেলেন। じー বাবার মৃত্যুর পর বিপ্রদাস দেখলে, যে গাছে তাদের আশ্রয় তার শিকড় খেয়ে দিয়েছে পোকায়। বিষয়সম্পত্তি ঋণের চোরাবালির উপর দাড়িয়ে— অল্প করে ডুবছে। ক্রিয়াকর্ম সংক্ষেপ ও চালচলন খাটো না করলে উপায় নেই। কুমুর বিয়ে নিয়েও কেবলই প্রশ্ন আসে, তার উত্তর দিতে মুখে বাধে। শেষকালে মুরনগর থেকে বাস তুলতে হল। কলকাতায় বাগবাজারের দিকে একটা বাড়িতে এসে উঠল। পুরোনো বাড়িতে কুমুদিনীর একটা প্রাণময় পরিমণ্ডল ছিল। চারি দিকে ফুলফল, গোয়ালঘর, পুজোবাড়ি, শস্তখেত, মানুষজন। অন্তঃপুরের বাগানে ফুল তুলেছে, সাজি ভরেছে, চুন-লঙ্কা ধনেপাতার সঙ্গে র্কাচ কুল মিশিয়ে অপথ্য করেছে ; চালত পেড়েছে, বোশেখ-জষ্টির ঝড়ে আমবাগানে আম কুড়িয়েছে। বাগানের পূর্বপ্রান্তে টেকিশাল, সেখানে লাডুকোটা প্রভৃতি উপলক্ষে মেয়েদের কলকোলাহলে তারও অল্প কিছু অংশ ছিল। খাওলায়-সবুজ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা খিড়কির পুকুর ঘন ছায়ায় স্নিগ্ধ, কোকিল-ঘুঘু-দোয়েল-খামার ডাকে মুখরিত। এইখানে প্রতিদিন সে জলে কেটেছে সাতার, নালফুল তুলেছে, ঘাটে বসে দেখেছে খেয়াল, আনমনে এক বসে করেছে পশম সেলাই। ঋতুতে ঋতুতে মাসে মাসে প্রকৃতির উৎসবের