পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २०१ বিপ্রদাসের পায়ের শব্দ শুনে কুমু চমকে উঠল। দাদাকে দেখে বললে, “আলে৷ জেলে দেব কি ?” “না কুমু, দরকার নেই” বলে বিপ্রদাস সিন্দুকে তার পাশে এসে বসল। কুমু তাড়াতাড়ি মেজের উপর নেমে বসে আস্তে আস্তে তার পায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। বিপ্রদাস স্নিগ্ধস্বরে বললে, “বৈঠকখানায় লোক এসেছিল, তাই তোকে ডেকে পাঠাই নি। এতক্ষণ একলা বসে ছিলি ?” কুমু লজ্জিত হয়ে বললে, “না, ক্ষেমাপিসি অনেকক্ষণ ছিলেন। কথাটা ফিরিয়ে দেবার জন্যে বললে, “বৈঠকখানায় কে এসেছিল, দাদা ?” “সেই কথাই তোকে বলতে এসেছি। এ বছর জষ্টি মাসে তুই আঠারো পেরিয়ে উনিশে পড়লি, তাই না ?” گير “হা দাদা, তাতে দোষ হয়েছে কী ?” “দোষের কথা না। আজ নীলমণি ঘটক এসেছিল। লক্ষ্মী বোন, লজ্জা করিস নে। বাবা যখন ছিলেন, তোর বয়স দশ—বিয়ে প্রায় ঠিক হয়েছিল । হয়ে গেলে তোর মতের অপেক্ষা কেউ করত না । আজ তো আমি তা পারি নে। রাজ মধুসুদন ঘোষালের নাম নিশ্চয়ই শুনেছিস । বংশমর্যাদায় ওঁরা খাটে নন। কিন্তু বয়সে তোর সঙ্গে অনেক তফাত। আমি রাজি হতে পারি নি। এখন, তোর মুখের একটা কথা শুনলেই চুকিয়ে দিতে পারি। লজ্জা করিস নে কুমু।” “না, লজ্জা করব না।” বলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। “যার কথা বলছ নিশ্চয়ই র্তার সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ঠিক হয়েই গেছে।” এটা সেই ঘটকের কথার প্রতিধ্বনি— কখন কথাটা এর মনের গভীরতায় আটকা পড়ে গেছে । বিপ্রদাস আশ্চর্য হয়ে বললে, “কেমন করে ঠিক হল ?” কুমু চুপ করে রইল। বিপ্রদাস তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললে, “ছেলেমাহুষি করিস নে, কুমু।” কুমুদিনী বললে, “তুমি বুঝবে না দাদা, একটুও ছেলেমামুষি করছি নে ৷” দাদার উপর তার অসীম ভক্তি। কিন্তু দাদা তো দৈববাণী মানে না, কুমুদিনী জানে এইখানেই দাদার দৃষ্টির ক্ষীণত । বিপ্রদাস বললে, “তুই তো তাকে দেখিস নি।” “ত হোক, আমি যে ঠিক জেনেছি।” বিপ্রদাস ভালো করেই জানে, এই জায়গাতেই ভাইবোনের মধ্যে অসীম প্রভেদ। কুমুর চিত্তের এই অন্ধকার মহলে ওর উপর দাদার একটুও দখল নেই। তবু বিপ্রদাস