পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२>९ রবীন্দ্র-রচনাবলী “কিন্তু ওঁর এ-সব কী করছেন ? এতে কি তোমাদের মান থাকবে ?” “ওদের দিকটাও ভেবে দেখিস। পূর্বপুরুষদের জন্মস্থানে আসছে, ধুমধাম করবে না ? বিয়ের ব্যাপার থেকে এটাকে স্বতন্ত্র করে দেখিস।” কুমু চুপ করে রইল। বিপ্রদাস থাকতে পারলে না, মরিয়া হয়ে বললে, “তোর মনে যদি একটুও খটকা থাকে বিয়ে এখনও ভেঙে দিতে পারি।” কুমুদিনী সবেগে মাথা নেড়ে বললে, “ছি ছি, সে কি হয় ?” অন্তর্যামীর সামনে সত্যগ্রন্থিতে তো গাঠ পড়ে গেছে। বাকি যেটুকু সে তো বাইরের। বিপ্রদাসের একেলে মন এতটা নিষ্ঠায় অধৈর্য হয়ে ওঠে। সে বললে, “দুই পক্ষের সততায় তবেই বিবাহবন্ধন সত্য। সুরে-বাধা এসরাজের কোনো মানেই থাকে না যদি বাজাবার হাতটা হয় বেস্তুরে । পুরাণে দেখ না, যেমন সীতা তেমনি রাম, যেমন মহাদেব তেমনি সতী, অরুন্ধতী যেমন বশিষ্ঠও তেমনি । হাল-আমলের বাবুদের নিজেদের মধ্যে নেই পুণ্য, তাই একতরফা সতীত্ব প্রচার করেন। তাদের তরফে তেল জোটে না, সলতেকে বলেন জলতে— শুকনো প্রাণে জলতে জলতেই ওরা গেল ছাই হয়ে ।” কুমুকে বলা মিথ্যে। এখন থেকে ও মনে মনে জোরের সঙ্গে জপতে লাগল, তিনি ভালোই হন, মন্দই হন, তিনি আমার পরম গতি । দু:খেষমুদ্বিগ্নমনা মুখেষু বিগতস্পৃহ: বীতরাগভয়ক্রোধঃ– শুধু যতিধর্মের নয়, সতীধর্মেরও এই লক্ষণ । সে ধর্ম সুখদু:খের অতীত— তাতে ক্রোধ নেই, ভয় নেই। আর অনুরাগ ? তারই বা অত্যাবশ্যকতা কিসের ? অকুরাগে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব থাকে, ভক্তি তারও বড়ো । তাতে আবেদন নেই, নিবেদন আছে। সতীধর্ম নির্ব্যক্তিক, যাকে ইংরেজিতে বলে ইম্পার্সেনাল। মধুসূদন-ব্যক্তিটিতে দোষ থাকতে পারে, কিন্তু স্বামী-নামক ভাব-পদার্থটি নির্বিকার নিরঞ্জন। সেই ব্যক্তিকতাহীন ধ্যানরূপের কাছে কুমুদিনী একমন হয়ে নিজেকে সমর্পণ করে দিলে। S8 ঘোষালদিঘির ধারে জঙ্গল সাফ হয়ে গেল— চেনা যায় না। জমি নিখুঁতভাবে সমতল, মাঝে মাঝে স্বরকি দিয়ে রাঙানো রাস্তা, রাস্তার ধারে ধারে আলো দেবার থাম। দিঘির পান। সব তোলা হয়েছে। ঘাটের কাছে তকতকে নতুন