পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী والا خا মরস্কম— রাক্ষুসে ওজনের জীবহত্যা হবে— অহিরাবণ মহীরাবণ হিড়িম্ব ঘটোৎকচ ইস্তিক কুম্ভকর্ণের পর্যন্ত পিণ্ডি দেবার উপযুক্ত, প্রেতলোকে দশমুণ্ড রাবণের চোয়াল ধরে যাবার মতো ।” বিপ্রদাস স্তম্ভিত হয়ে রইল, কিছু বললে না। নবগোপাল বললে, “তোমারই হুকুম ওই বিলে কেউ শিকার করতে পাবে না । সেবার জেলার ম্যাজিস্টেটকে পর্যন্ত ঠেকিয়েছিলে— আমরা তো ভয় করেছিলুম তোমাকেও পাছে সে রাজহাস ভুল করে গুলি করে বসে। লোকটা ছিল ভদ্র, চলে গেল । কিন্তু এরা গো-মূগ-দ্বিজ কাউকে মানবার মতো মানুষ নয়। তবু যদি বল তো একবার না হয়—” বিপ্রদাস ব্যস্ত হয়ে বললে, “না না, কিছু বোলো না।” বিপ্রদাস বাঘ-শিকারে জেলার মধ্যে সব-সেরা। কোনো একবার পাখি মেরে তার এমন ধিক্কার হয়েছিল যে, সেই অবধি নিজের এলাকায় পাখি মারা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে। শিয়রের কাছে কুমু বসে বিপ্রদাসের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। নবগোপাল চলে গেলে সে মুখ শক্ত করে বললে, “দাদা, বারণ করে পাঠাও।” “কী বারণ করব ?” “পাখি মারতে।” "ওরা ভুল বুঝবে কুমু, সইবে না।” "তা বুঝুক ভুল। মান-অপমান শুধু ওদের একলার নয়।” বিপ্রদাস কুমুর মুখের দিকে চেয়ে মনে মনে হাসলে। সে জানে কঠিন নিষ্ঠার সঙ্গে কুমু মনে মনে সতীধর্ম অনুশীলন করছে। ছায়েবাহুগতাস্বচ্ছা। সামান্য পাখির প্রাণ নিয়ে কায়ার সঙ্গে ছায়ার পথভেদ ঘটবে না কি ? বিপ্রদাস স্নেহের স্বরে বললে, “রাগ করিস নে কুমু, আমিও একদিন পাখি মেরেছি। তখন অন্যায় বলে বুঝতেই পারি নি। এদেরও সেই দশা।” অক্লান্ত উৎসাহের সঙ্গে চলল শিকার, পিকনিক, এবং সন্ধেবেলায় ব্যাণ্ডের । সংগীত-সহযোগে ইংরেজ অভ্যাগতদের নাচ । বিকালে টেনিস ; তা ছাড়া দিঘির নৌকোর পরে তিন-চার পর্দা তুলে দিয়ে বাজি রেখে পালের খেলা ; তাই দেখতে গ্রামের লোকেরা দিঘির পাড়ে দাড়িয়ে যায়। রাত্রে ডিনারের পরে চীৎকার চলে, ‘ফর হৗ ইজ এ জলি গুড ফেলো।’ এই-সব বিলাসের প্রধান নায়ুকনায়িকা সাহেব- ' মেম, তাতেই গায়ের লোকের চমক লাগে। এরা ষে সোলার টুপি মাথায় ছিপ ফেলে