পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী মধুসূদন নির্জন তাবুর ভিতর ঢুকে মুখ অন্ধকার করে একটা চাপা হুংকার দিলে—“হ ।” ছোটাে ভাই রাধু এসে বললে, “দাদা, আর কেন ? চলে।” “কোথায় ?” “ফিরে যাই কলকাতায় । এরা সব বদমাইশি করছে। এদের চেয়ে বড়ো বড়ে ঘরের পাত্রী তোমার কড়ে আঙল নাড়ার অপেক্ষায় বসে। একবার তু করলেই হয়।” মধুসূদন গর্জন করে উঠে বললে, “য চলে।” এক শো বছর পূর্বে যেমন ঘটেছিল আজও তাই। এবারেও এক পক্ষের আড়ম্বরের চূড়োটা অন্য পক্ষের চেয়ে অনেক উচু করেই গড় হয়েছিল, অন্তপক্ষ তা রাস্ত পার হতে দিলে না। কিন্তু আসল হারজিত বাইরে থেকে দেখা যায় না। তার ক্ষেত্রট লোকচক্ষুর অগোচরে । চাটুজ্যেদের প্রজারা খুব হেসে নিলে। বিপ্রদাস রোগশয্যায় ; তার কানে কিছুই পৌঁছোল না। > a বিয়ের দিন রাজার হুকুম, কনের বাড়ি যাবার পথে ধুমধাম একেবারেই বন্ধ । আলো জলল না, বাজনা বাজল না, সঙ্গে কেবল নিজেদের পুরোহিত, আর দুইজন ভাট। পালকিতে করে নিঃশব্দে বিয়েবাড়িতে বর এল, লোকে হঠাৎ বুঝতেই পারলে ন। ও দিকে মধুপুরীর তাবুতে আলো জালিয়ে ব্যাও বাজিয়ে বিপরীত হৈ হৈ শব্দে বরযাত্রীর দল আহারে আমোদে প্রবৃত্ত। নবগোপাল বুঝলে এটা হল পালটা জবাব । এমন স্থলে কন্যাপক্ষ হাতে পায়ে ধরে বরপক্ষের সাধ্যসাধনা করে ; নবগোপাল তার কিছুই করলে না। একবার জিজ্ঞাসাও করলে না, বরযাত্রীদের छ्ल कँौ । কুমুদিনী সাজসজ্জা করে বিবাহ-আসরে যাবার আগে দাদাকে প্রণাম করতে এল ; তার সর্বশরীর কাপছে। বিপ্রদাসের তখন এক শো পাচ ডিগ্রি জর, বুকে পিঠে রাইসরষের পলস্তার ; কুমুদিনী তার পায়ের উপর মাথা ঠেকিয়ে আর থাকতে পারলে না, ফু পিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। ক্ষেমাপিসি মুখে হাত চাপা দিয়ে বললে, “ছি ছি, আমন করে র্কাদতে নেই।” বিপ্রদাস একটু উঠে বসে ওকে হাত ধরে পাশে বসিয়ে ওর মুখের দিকে চেয়ে