পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাদের মধ্যে ঘরশক্রর অভাব নেই। সবার সামনে এই অত্যাচার। ক্ষেমাপিসি মুখ গে। করে বসে রইলেন। বরকনে যখন বিদায় নিতে এল তার মুখ দিয়ে যেন আশীৰ্বাদ বেরোতে চাইল না। সবাই বললে, এ কাজটা কলকাতায় সেরে নিলে তো কারও কিছু বলবার কথা থাকত না। বাপের বাড়ির অপমানে কুমু একান্তই সংকুচিত হয়ে গেল— মনে হতে লাগল সেই যেন অপরাধিনী তার সমস্ত পূর্বপুরুষদের কাছে। মনে মনে তার ঠাকুরের প্রতি অভিমান করে বার বার জিজ্ঞাসা করতে লাগল, “আমি তোমার কাছে কী দোষ করেছি যে জন্যে আমার এত শাস্তি ! আমি তো তোমাকেই বিশ্বাস করে সমস্ত স্বীকার করে নিয়েছি।” বরকনে গাড়িতে উঠল। কলকাতা থেকে মধুসুদন যে ব্যাও এনেছিল তাই উচ্চৈঃস্বরে নাচের স্বর লাগিয়ে দিলে। মস্ত একটা শামিয়ানার নীচে হোমের আয়োজন। ইংরেজ মেয়েপুরুষ অভ্যাগত কেউ-ব গদিওআলা চৌকিতে বসে, কেউ-বা কাছে এসে ঝুকে পড়ে দেখতে লাগল। এরই মধ্যে তাদের জন্যে চা-বিস্কুটও এল। একটা টিপায়ের উপর মন্তবড়ে একটা ওয়েডিং কেকও সাজানো আছে। অনুষ্ঠান সারা হয়ে গেলে এরা এসে যখন কনগ্র্যাচুলেট করতে লাগল, কুমু মুখ লাল করে মাথা হেঁট করে দাড়িয়ে রইল। একজন মোটাগোছের প্রৌঢ় ইংরেজ মেয়ে ওর বেনারসি শাড়ির আঁচল তুলে ধরে পর্যবেক্ষণ করে দেখলে ; ওর হাতে খুব মোট সোনার বাজুবন্ধ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতেও তার বিশেষ কৌতুহল বোধ হল। ইংরেজি ভাষায় প্রশংসাও করলে। অনুষ্ঠান সম্বন্ধে মধুসূদনকে একদল বললে, “how interesting”; ETH FF7FI TFIIF; “isn’t it ?” এই মধুসূদনকে কুমু তার দাদা আর অন্যান্য আত্মীয়দের সঙ্গে ব্যবহার করতে দেখেছে— আজ তাকেই দেখলে ইংরেজ বন্ধুমহলে। ভদ্রতায় অতি গদগদভাবে অবনম্র, আর হাসির আপ্যায়নে মুখ নিয়তই বিকশিত। চাদের যেমন এক পিঠে আলো আর-এক পিঠে চির-অন্ধকার, মধুসূদনের চরিত্রেও তাই। ইংরেজের অভিমুখে তার মাধুর্য পূর্ণচাদের আলোর মতোই যেমন উজ্জল তেমনি স্নিগ্ধ। অন্য দিকটা দুৰ্গম, দুর্দ খ এবং জমাট বরফের নিশ্চলতায় দুর্ভেদ্য । সেলুন-গাড়িতে ইংরেজ বন্ধুদের নিয়ে মধুসূদন ; অন্য রিজার্ড-করা গাড়িতে মেয়েদের দলে কুমু। তার কেউ-ব ওর হাত তুলে টিপে দেখে, কেউ-বা চিবুক তুলে মুখত্ৰ বিশ্লেষণ করে ; কেউ-ব বলে চ্যাঙ, কেউ-বা বলে রোগ। কেউ-বা অতি ভালোমানুষের মতে জিজ্ঞাসা করে, “ই গা, গায়ে কী রঙ মাখ, বিলেত থেকে তোমার ভাই বুঝি কিছু পাঠিয়েছে ?” সকলেই মীমাংসা করলে, চোখ বড়ো নয়,