পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२br রবীন্দ্র-রচনাবলী ”আহ, কী স্বপুরুষ ! এমন কখনও চক্ষে দেখি নি। ওই-যে গান শুনেছিলেম কীর্তনে— গোরার রূপে লাগল রসের বান— ভাসিয়ে নিয়ে যায় নদীয়ার পুরনারীর প্রাণ আমার তাই মনে পড়ল।” মুহূর্তে কুমুর মন গলে গেল। মুখ আড় করে জানলার দিকে রইল চেয়ে – বাইরের মাঠ বন আকাশ অশ্রবাম্পে ঝাপসা হয়ে গেল । মোতির মার বুঝতে বাকি ছিল না কোন জায়গায় কুমুর দরদ, তাই নানারকম করে ওর দাদার কথাই আলোচনা করলে। জিজ্ঞাসা করলে বিয়ে হয়েছে কি না। কুমু বললে, “না।” . মোতির মা বলে উঠল, “মরে যাই । অমন দেবতার মতে রূপ, এখনও ঘর খালি ! কোন ভাগ্যবতীর কপালে আছে ওই বর ” কুমু তখন ভাবছে– দাদা গিয়েছিলেন সমস্ত অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে, কেবল আমারই জন্তে ! তার পরে এর একবার দেখতেও এলেন না ! কেবলমাত্র টাকার জোরে এমন মানুষকেও অবজ্ঞা করতে সাহস করলেন । তার শরীর এইজন্যেই বুঝিবা ভেঙে পড়ল । বৃথা আক্ষেপের সঙ্গে বার বার মনে মনে বলতে লাগল— দাদা কেন গেল ইস্টেশনে ? কেন নিজেকে খাটো করলে ? আমার জন্যে ? আমার মরণ হল না কেন ? যে কাজটা হয়ে গেছে, আর ফেরানো যাবে না, তারই উপর ওর মনটা মাথ৷ ঠুকতে লাগল। কেবলই মনে পড়তে লাগল, সেই রোগে-ক্লান্ত শাস্ত মুখ, সেই আশীর্বাদে-ভরা স্নিগ্ধগম্ভীর দুটি চোখ । こe রেলগাড়ি হাওড়ায় পৌঁছোল, বেল তখন চারটে হবে। ওড়নায়-চাদরে গ্রন্থিবদ্ধ হয়ে বরকনে গিয়ে বসল ব্রুহাম গাড়িতে। কলকাতার দিবালোকের অসংখ্য চক্ষু, তার সামনে কুমুর দেহমন সংকুচিত হয়ে রইল। ষে একটি অতিশয় শুচিতাবোধ এই উনিশ বছরের কুমারীজীবনে ওর অঙ্গে অঙ্গে গভীর করে ব্যাপ্ত, সেটা যে কর্ণের সহজ কবচের মতো, কেমন করে ও হঠাং ছিন্ন করে ফেলবে ? এমন মন্ত্র অাছে যে মন্ত্রে এই কবচ এক নিমেষে আপনি খসে যায়। কিন্তু সে মন্ত্র হৃদয়ের মধ্যে