পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ২৩৫ গাছটাকে জেরবার করে দিয়েছে। অন্তঃপুরে এই একটুমাত্র জমি, বাকি সমস্ত জমি বাইরের দিকে। সেটা লতামণ্ডপে, বিচিত্র ফুলের কেয়ারিতে, ছাট ঘাসের মাঠে, খোয়া ও স্বরকি -দেওয়া রাস্তায়, পাথরের মূর্তি ও লোহার বেঞ্চিতে স্থসজ্জিত। অন্দরমহলে তেতলায় কুমুদিনীর শোবার ঘর। মস্ত বড়ো খাট মেহগনি কাঠের ; ফ্রেমে নেটের মশারি, তাতে সিল্কের ঝালর। বিছানার পায়ের দিকে পুরো বহরের একটা নিরাবরণ মেয়ের ছবি, বুকের উপর দুই হাত চেপে লজ্জার ভান করছে। শিয়রের দিকে মধুসূদনের নিজের অয়েলপেটিং, তাতে তার কাশ্মীরি শালের কারুকার্যটাই সবচেয়ে প্রকাশমান। এক দিকে দেয়ালের গায়ে কাপড় রাখবার দেরাজ, তার উপরে আয়না ; আয়নার দু দিকে দুটে চীনেমাটির শামাদান, সামনে চীনে মাটির থালির উপর পাউডারের কোঁটে, রুপো-বাধানো চিরুনি, তিন-চার রকমের এসেন্স, এসেন্স ছিটোবার পিচকারি এবং আরও নানা রকমের প্রসাধনের সামগ্ৰী, , বিলিতি অ্যাসিস্টাণ্টের কেন। নানাশাখাযুক্ত গোলাপি কাচের ফুলদানিতে ফুলের তোড়া। আর-এক দিকে লেখবার টেবিল, তাতে দামি পাথরের দোয়াতদান, কলম ও কাগজকাটা। ইতস্তত মোট গদিওআল। সোফা ও কেদারা— কোথাও ব| টিপাই, তাতে চা খাওয়া যায়, তাসখেলা যেতেও পারে। নতুন মহারানীর উপযুক্ত শয়নঘর কী রকম হওয়া বিধিসংগত এ কথা মধুসূদনকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে হয়েছে। এমন হয়ে উঠল, যেন অন্দরমহলের সর্বোচ্চতলার এই ঘরটি ময়লা কথা গায়ে-দেওয়া ভিখিরির মাথায় জরিজহরাত-দেওয়া পাগড়ি । অবশেষে একসময়ে গোলমাল-ধুমধামের বানডাকা দিন পার হয়ে রাত্রিবেলা কুমু এই ঘরে এসে পৌঁছোল । তাকে নিয়ে এল সেই মোতির মা। সে ওর সঙ্গে আজ রাত্রে শোবে ঠিক হয়েছে। আরও একদল মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আসছিল। তাদের কৌতুহল ও আমোদের নেশা মিটতে চায় না— মোতির মা তাদের বিদায় করে দিয়েছে। ঘরের মধ্যে এসেই এক হাতে সে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললে, “আমি কিছুখনের জন্যে যাই ওই পাশের ঘরে— তুমি একটু কেঁদে নাও ভাই, চোখের জল যে বুক ভরে জমে উঠেছে।” বলে সে চলে গেল । কুমু চৌকির উপর বসে পড়ল। কান্ন পরে হবে, এখন ওর বড়ো দরকার হয়েছে নিজেকে ঠিক করা। ভিতরে ভিতরে সকলের চেয়ে যে-ব্যথাটা ওকে বাজছিল সে হচ্ছে নিজের কাছে নিজের অপমান । এতকাল ধরে ও যা-কিছু সংকল্প করে এসেছে ওর বিদ্রোহী মন সম্পূর্ণ তার উলটে দিকে চলে গেছে। সেই মনটাকে শাসন করবার একটুও সময় পাচ্ছিল না। ঠাকুর, বল দাও, বল দাও, আমার জীবন কালি করে وان لا هج