পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী দিয়ে না। আমি তোমার দাসী, আমাকে জয়ী করে, সে জয় তোমারই । পরিণতবয়সী অঁাটর্সটি গড়নের শু্যামবর্ণ একটি সুন্দরী বিধবা ঘরে ঢুকেই বললে, “মোতির মা তোমাকে একটু ছুটি দিয়েছে সেই ফাকে এসেছি ; কাউকে তে কাছে ঘেষতে দেবে না, বেড়ে রাখবে তোমাকে— যেন সিধকাটি নিয়ে বেড়াচ্ছি, ওর বেড়া কেটে তোমাকে চুরি করে নিয়ে যাব। আমি তোমার জা, খামাসুন্দরী ; তোমার স্বামী আমার দেওর। আমরা তো ভেবেছিলুম শেষ পর্যন্ত জমাখরচের খাতাই হবে ওর বউ। তা ওই খাতার মধ্যে জাদু আছে ভাই, এত বয়সে এমন সুন্দরী ওই খাতার জোরেই জুটল। এখন হজম করতে পারলে হয়। ওইখানে খাতার মন্তর খাটে না । সত্যি করে বলে ভাই, আমাদের বুড়ে দেওরটিকে তোমার পছন্দ হয়েছে তো ?” কুমু অবাক হয়ে রইল, কী জবাব দেবে ভেবেই পেলে না। খাম বলে উঠল, “বুঝেছি, তা পছন্দ না হলেই বা কী, সাত পাক যখন ঘুরেছ তখন একুশ পাক উলটে। ঘুরলেও ফাস খুলবে না।” o কুমু বললে, “এ কী কথা বলছ দিদি ” খাম জবাব দিলে, “খোলসা করে কথা বললেই কি দোষ হয় বোন ? মুখ দেখে কি বুঝতে পারি নে ? তা দোষ দেব না তোমাকে। ও আমাদের আপন বলেই কি চোখের মাথা খেয়ে বসেছি ? বড়ো শক্ত হাতে পড়েছ বউ, বুঝে স্থঝে চোলো।” এমন সময় মোতির মাকে ঘরে ঢুকতে দেখেই বলে উঠল, “ভয় নেই, ভয় নেই, বকুলফুল, যাচ্ছি আমি। ভাবলুম তুমি নেই এই ফাকে আমাদের নতুন বউকে একবার দেখে আসি গে। তা সত্যি বটে, এ কৃপণের ধন, সাবধানে রাখতে হবে। সইকে বলছিলুম আমাদের দেওরের এ যেন হল আধ-কপালে মাথাধরা ; বউকে ধরেছে ওর বঁ। দিকের পাওয়ার-কপালে, এখন ডান দিকের রাখার-কপালে যদি ধরতে পারে তবেই পুরোপুরি হবে।” এই বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে মুহূর্ত পরে ঘরে ঢুকে কুমুর সামনে পানের ডিবে খুলে ধরে বললে, “একটা পান নেও । দোক্ত খাওয়া অভ্যেস আছে ?” কুমু বললে, “ন।” তখন এক টিপ দোক্ত নিয়ে নিজের মুখে পুরে দিয়ে খাম মন্দগমনে বিদায় নিলে । 4. “এখনই বদিমাসিকে খাইয়ে বিদায় করে আসছি, দেরি হবে না” বলে মোতির ম৷ চলে গেল । শুiমামুন্দরী কুমুর মনের মধ্যে ভারি একটা বিস্বাদ জাগিয়ে দিলে। আজকে কুমুর সবচেয়ে দরকার ছিল মায়ার আবরণ, সেইটেই সে আপন মনে গড়তে বসেছিল,