পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २8१ পালিয়ে গেল। মধুসূদন কাচের কাগজচাপা হাতে করে যথাস্থানে ধীরে ধীরে সেটা গুছিয়ে রাখলে। তার পরে নিশ্চিতপ্রত্যয়ের কণ্ঠে শান্ত গম্ভীর স্বরে বললে, “হাবলু তোমার ঘর থেকে এটা চুরি করে নিয়েছিল। জিনিসপত্র সাবধান করে রাখতে শিখে ।” কুমু তীক্ষ স্বরে বললে, “ও চুরি করে নি।” “আচ্ছা, বেশ, তা হলে সরিয়ে নিয়েছে।” “ন, আমিই ওকে দিয়েছি।” “এমনি করে ওর মাথা খেতে বসেছ বুঝি ? একটা কথা মনে রেখো, আমার হুকুম ছাড়া জিনিসপত্র কাউকে দেওয়া চলবে না। আমি এলোমেলো কিছুই ভালোবাসি নে ৷” কুমু দাড়িয়ে উঠে বললে, “তুমি নাও নি আমার নীলার আংটি ?” মধুসূদন বললে, “ই নিয়েছি।” “তাতেও তোমার ওই কঁাচের ঢেলাটার দাম শোধ হল না ?” “আমি তো বলেছিলুম, ওটা তুমি রাখতে পারবে না।” “তোমার জিনিস তুমি রাখতে পারবে, আর আমার জিনিস আমি রাখতে পারব না ?” “এ বাড়িতে তোমার স্বতন্ত্র জিনিস বলে কিছু নেই।” “কিছু নেই? তবে রইল তোমার এই ঘর পড়ে।” কুমু যেই গেছে, ব্যস্তসমস্ত হয়ে খাম ঘরে প্রবেশ করে বললে, “বউ কোথায় গেল ?” “কেন ?” “সকাল থেকে ওর খাবার নিয়ে বসে আছি, এ বাড়িতে এসে বউ কি খাওয়াও বন্ধ করবে ?” “ত হয়েছে কী ? মুরনগরের রাজকন্য। না হয় নাই খেলেন ? তোমরা কি ওঁর বাদী নাকি? “ছি ঠাকুরপো, ছেলেমামুষের উপর অমন রাগ করতে নেই। ও যে এমন না খেয়ে খেয়ে কাটাবে এ আমরা সহ করতে পারি নে। সাধে সেদিন মুছে । গিয়েছিল ?” মধুসূদন গর্জন করে উঠল, “কিছু করতে হবে না, যাও চলে! খিদে পেলে আপনিই খাবে।”