&8br রবীন্দ্র-রচনাবলী শু্যাম যেন অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে চলে গেল । মধুসূদনের মাথায় রক্ত চড়তে লাগল। দ্রুতবেগে নাবার ঘরে জলের বর্ণঝরি খুলে দিয়ে তার নীচে মাথা পেতে দিলে। २१ সন্ধে হয়ে এল, সেদিন কুমুকে কোথাও খুজে পাওয়া যায় না। শেষকালে দেখা গেল, ভাড়ারঘরের পাশে একটা ছোটো কোণের ঘরে যেখানে প্রদীপ পিলসুজ তেলের ল্যাম্প প্রভৃতি জমা করা হয় সেইখানে মেজের উপর মাদুর বিছিয়ে বসে আছে। মোতির মা এসে জিজ্ঞাসা করলে, “এ কী কণও দিদি ?” কুমু বললে, “এ বাড়িতে আমি সেজবাতি সাফ করব, আর এইখানে আমার স্থান ।” মোতির মা বললে, “ভালো কাজ নিয়েছ ভাই, এ বাড়ি তুমি আলো করতেই তো এসেছ, কিন্তু সেজন্যে তোমাকে সেজবাতির তদারক করতে হবে না। এখন চলো ।” কুমু কিছুতে নড়ল না। মোতির মা বললে, “তবে আমি তোমার কাছে শুই ।” কুমু দৃঢ়ম্বরে বললে, “ন।” মোতির মা দেখলে এই ভালোমান্বষ-মেয়ের মধ্যে হুকুম করবার জোর আছে। তাকে চলে যেতে হল। মধুসূদন রাত্রে শুতে এসে কুমুর খবর নিলে। যখন খবর শুনলে, প্রথমটা ভাবলে, “বেশ তো ওই ঘরেই থাকৃ-না, দেখি কতদিন থাকতে পারে। সাধ্যসাধনা করতে গেলেই জেদ বেড়ে যাবে।” এই বলে আলো নিবিয়ে দিয়ে শুতে গেল। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসে না। প্রত্যেক শব্দেই মনে হচ্ছে ওই বুঝি আসছে। একবার মনে হল, যেন দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে। বিছানা ছেড়ে বেরিয়ে এসে দেখে কেউ কোথাও নেই। যতই রাত হয় মনের মধ্যে ছট্ফট্ করতে থাকে। কুমুকে যে অবজ্ঞা করবে কিছুতেই সে শক্তি পাচ্ছে না। অথচ নিজে এগিয়ে গিয়ে তার কাছে হার মানবে এটা ওর পলিসিবিরুদ্ধ। ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে এসে শুল, কিন্তু ঘুম আসে না। ছট্ফট্ করতে করতে উঠে পড়ল, কোনোমতেই কৌতুহল সামলাতে পারলে না। একটা লণ্ঠন হাতে করে নিদ্রিত কক্ষশ্রেণী নিঃশব্দপদে পার হয়ে অন্তঃপুরের সেই ফরাশখানার