পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミQミ রবীন্দ্র-রচনাবলী “কেন বলে দেখি ?” “যাতে আমার দ্বারা তোমার সংশোধন হয়, আর তোমার দ্বারা সংশোধন হয় ওঁর নতুন ব্যবসায়ের নতুন আমদানির ।” “তা আমার উপরে তোমার সংশোধনের কাজটা শুরু করে।– দেখি দাদার চেয়ে তোমার হাতষশ আছে কি না।” নবীন কাতর হয়ে বললে, "দাদার উড়ে চাকরটা ওঁর দামি ডিনার-সেটের একটা পিরিচ ভেঙেছিল, তার জরিমানার প্রধান অংশ আমাকেই দিতে হয়েছে, জান তো— কেননা জিনিসগুলো আমারই জিন্মে। কিন্তু এবারে যে-জিনিসটা ঘরে এল সেও কি আমারই জিন্মে ? তবু জরিমানাটা তোমাতে-আমাতেই বাটোয়ার করে দিতে হবে । অতএব যা করতে হয় করে, আমাকে আর দুঃখ দিয়ে না মেজেবিউ ।” “জরিমান বলতে কী বোঝায় শুনি ।” “রজবপুরে চালান করে দেবেন। মাঝে মাঝে তো সেইরকম ভয় দেখান।” “ভয় পাও বলেই ভয় দেখান। একবার তে পাঠিয়েছিলেন, আবার রেলভাড়া দিয়ে ফিরিয়ে আনতে হয় নি ? তোমার দাদা রেগেও হিসেবে ভুল করেন না। জানেন আমাকে ঘরকন্ন থেকে বরখাস্ত করলে সেটা একটুও সস্ত হবে না। আর যদি কোথাও এক পয়সাও লোকসান হয় সে-ঠক ওঁর সইবে না।” “বুঝলুম, এখন কী করতে হবে বলে না।” “তোমার দাদাকে বোলো, যতবড়ে রাজাই হোন না, মাইনে করে লোক রেখে রানীর মান ভাঙাতে পারবেন না— মানের বোঝা নিজেকেই মাথায় করে নামাতে হবে। বাসরঘরের ব্যাপারে মুটে ডাকতে বারণ কোরো।” “মেজেবিউ, উপদেশ তাকে দেবার জন্যে আমার দরকার হবে না, দুদিন বাদে নিজেরই হুশি হবে। ইতিমধ্যে দূতীগিরির কাজটা করে, ফল হোক বা না হোক। দেখাতে পারব নিমক খেয়ে সেটা চুপচাপ হজম করছি নে।” মোতির মা কুমুকে গেল খুজতে । জানত সকালবেলা তাকে পাওয়া যাবে ছাদের উপরে। উচু প্রাচীর-দেওয়া ছাদ, তার মাঝে মাঝে ঘুলঘুলি। এলোমেলে গোটাকতক টব, তাতে গাছ নেই। এক কোণে লোহার জাল-দেওয়া একটা বড়ো ভাঙা চৌকে খাচা ; তার কাঠের তলাটা প্রায় সবটা জীর্ণ। কোনো এক সময় খরগোশ কিম্ব। পায়রা এতে রাখা হত, এখন আচার-আমসত্ত্ব প্রভৃতিকে কাকের চৌর্যবৃত্তি থেকে বঁচিয়ে রোদরে দেবার কাজে লাগে। এই ছাদ থেকে মাথার উপরকার আকাশ দেখতে পাওয়া যায়, দিগন্ত দেখা যায় না। পশ্চিম-আকাশে একটা লোহার