পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२¢8 রবীন্দ্র-রচনাবলী চাইলে— জিজ্ঞাসা করলে, “এইবার তোমাকেই তো পাব ? অপরাজিতার ফুল বললে, “এই তো পেয়েইছ।’ অস্তরের এতদিনের এত আয়োজন ব্যর্থ হল— একেবারে ঠন করে উঠল পাথরট, ভরাডুবি হল এক মুহূর্তেই। ব্যথিত যৌবন আজ আবার খুজতে বেরিয়েছে; কোথায় দেবে তার ফুল ! থালিতে যা ছিল তার অর্ঘ্য, সে যে আজ বিষম বোঝা হয়ে উঠল ! তাই আজ এমন করে প্রাণপণে গাইছে, ‘মেরে গিরিধর গোপাল, ওঁর নাহি কোহি ।” কিন্তু আজ এ গান শূন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পৌঁছোল না কোথাও । এই শূন্যতায় কুমুর মন ভয়ে ভরে উঠল। আজ থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনের গভীর আকাজক্ষা কি ওই ধোয়ার কুণ্ডলীর মতোই কেবল সঙ্গিহীন নিঃশ্বসিত হয়ে উঠবে ? মোতির মা দূরে পিছনে বসে রইল। সকালের নির্মল আলোয় নির্জন ছাদে এই অসজ্জিতা সুন্দরীর মহিমা ওকে বিস্মিত করে দিয়েছে। ভাবছে, এ বাড়িতে . ওকে কেমন করে মানাবে? এখানে যে-সব মেয়ে আছে এর তুলনায় তারা কোন জাতের ? তারা আপনি ওর থেকে পৃথক হয়ে পড়েছে, ওর উপরে রাগ করছে কিন্তু ওর সঙ্গে ভাব করতে সাহস করছে না । বসে থাকতে থাকতে মোতির মা হঠাৎ দেখলে কুমু দুই হাতে তার ওড়নার আঁচল মুখে চেপে ধরে কেঁদে উঠেছে। ও আর থাকতে পারলে না, কাছে এসে গল। জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, “দিদি আমার, লক্ষ্মী আমার, কী হয়েছে বলে আমাকে ।” কুমু অনেকক্ষণ কথা কইতে পারলে না। একটু সামলে নিয়ে বললে, “আজও দাদার চিঠি পেলুম না, কী হয়েছে তার বুঝতে পারছি নে ৷” “চিঠি পাবার কি সময় হয়েছে ভাই ?” 疊 “নিশ্চয় হয়েছে। আমি তার অস্থখ দেখে এসেছি। তিনি জানেন, খবর পাবার জন্তে আমার মনটা কী রকম করছে ।” মোতির মা বললে, “তুমি ভেবে না, খবর নেবার আমি একটা-কিছু উপায় করব।” কুমু টেলিগ্রাফ করবার কথা অনেকবার ভেবেছে, কিন্তু কাকে দিয়ে করাবে। যেদিন মধুসুদন নিজেকে ওর দাদার মহাজন বলে বড়াই করেছিল সেইদিন থেকে মধুসূদনের কাছে ওর দাদার উল্লেখমাত্র করতে ওর মুখে বেধে যায়। আজ মোতির মাকে বললে, “তুমি যদি দ্বাদাকে আমার নামে টেলিগ্রাফ করতে পার তো অামি বাচি ।” মোতির মা বললে, “তাই করব, ভয় কী ?”