পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २¢¢ কুমু বললে, “তুমি জান, আমার কাছে একটিও টাকা নেই।” “কী বল, দিদি, তার ঠিক নেই। সংসারখরচের যে টাকা আমার কাছে থাকে, সে তো তোমারই টাকা। আজ থেকে আমি যে তোমারই নিমক খাচ্ছি।” কুমু জোর করে বলে উঠল, “না না না, এ বাড়ির কিছুই আমার নয়, সিকি পয়সাও না ।” “আচ্ছ। ভাই, তোমার জন্যে না হয় অামার নিজের টাকা থেকে কিছু খরচ করব। চুপ করে রইলে কেন ? তাতে দোষ কী ? টাকাটা আমি যদি অহংকার করে দিতুম, তুমি অহংকার করে না নিতে পারতে। ভালোবেসে যদি দিই, তা হলে ভালোবেসেই নেবে না কেন ?” কুমু বললে, “নেব।” মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “দিদি, তোমার শোবার ঘর কি আজও শূন্য • থাকবে ?” কুমু বললে, “ওখানে আমার জায়গা নেই।” মোতির মা পীড়াপীড়ি করলে না। তার মনের ভাবখানা এই যে, পীড়াপীড়ি করবার ভার আমার নয় ; যার কাজ সে করুক । কেবল আস্তে আস্তে সে বললে, "একটু দুধ এনে দেব তোমার জন্যে ?” কুমু বললে, “এখন না, আর একটু পরে।” তার ঠাকুরের সঙ্গে বোঝাপড় করতে এখনও বাকি আছে। এখনও মনের মধ্যে কোনো জবাব পাচ্ছে না । মোতির মা আপন ঘরে গিয়ে নবীনকে ডেকে বললে, “শোনো একটি কথা । বড়োঠাকুরের বাইরের ঘরে তার ডেস্কের উপর খোজ করে এসে গে, দিদির কোনো চিঠি এসেছে কি না— দেরাজ খুলেও দেখো ।” নবীন বললে, “সর্বনাশ !” “তুমি যদি না যাও তো আমি যাব।” “এ যে ঝোপের ভিতর থেকে ভালুকের ছানা ধরতে পাঠানে৷ ” , "কর্তা গেছেন আপিসে, তার কাজ সেরে আসতে বেলা একটা হবে— এর মধ্যে—” “দেখো মেজেবিউ, দিনের বেলায় এ কাজ কিছুতেই আমার দ্বারা হবে না, এখন চারি দিকে লোকজন। আজ রাত্রে তোমাকে খবর দিতে পারব।” মোতির মা বললে, “আচ্ছ, তাই সই। কিন্তু কুরনগরে এখনই তার করে জানতে হবে বিপ্রদাসবাবু কেমন আছেন।”