পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৫৬ ৷ রবীন্দ্র-রচনাবলী “বেশ কথা, তা দাদাকে জানিয়ে করতে হবে তো ?” “मां ।” “মেজেবিউ, তুমি যে দেখি মরিয়া হয়ে উঠেছ ? এ বাড়িতে টিকটিকি মাছি ধরতে পারে না কর্তার হুকুম ছাড়া, আর আমি—” & “দিদির নামে তার যাবে তোমার তাতে কী ?” “আমার হাত দিয়ে তো যাবে।” “বড়োঠাকুরের আপিসে ঢের তার তো রোজ দরোয়ানকে দিয়ে পাঠানো হয়, তার সঙ্গে এটা চালান দিয়ে। এই নাও টাকা, দিদি দিয়েছেন।” কুমুর সম্বন্ধে নবীনের মনও যদি করুণায় ব্যথিত না থাকত তা হলে এতবড়ে দুঃসাহসিক কাজের ভার সে কিছুতেই নিতে পারত না। २> যথানিয়মে মধুসূদন বেলা একটার পরে অন্তঃপুরে খেতে এল । যথানিয়মে আত্মীয়-স্ত্রীলোকের তাকে ঘিরে বসে কেউ-বা পাখা দিয়ে মাছি তাড়াচ্ছে, কেউ-বা পরিবেশন করছে। পূর্বেই বলেছি, মধুসূদনের অন্তঃপুরের ব্যবস্থায় ঐশ্বর্যের আড়ম্বর ছিল না। তার আহারের আয়োজন পুরানো অভ্যাসমতই। মোট চালের ভাত না হলে না মুখে রোচে, না পেট ভরে। কিন্তু পাত্রগুলি দামি। রুপোর থালা, রুপোর বাটি, রুপোর গ্লাস। সাধারণত কলাইয়ের ডাল, মাছের ঝোল, তেঁতুলের অম্বল, কাটাচচ্চড়ি হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী ; তার পরে সব-শেষে বড়ো একবাটি দুধ চিনি দিয়ে শেষ বিন্দু পর্যন্ত সমাধা করে পানের বোটায় মোট এক ফোটা চুন সহযোগে একটা পান মুখে ও দুটাে পান ডিবেয় ভরে পনেরো মিনিট কাল তামাক টানতে টানতে বিশ্রাম করে তৎক্ষণাৎ আপিসে প্রস্থান। অপেক্ষাকৃত দৈন্যদশা থেকে আজ পর্যন্ত সুদীর্ঘকাল এর আর ব্যতিক্রম হয় নি। আহারে মধুসূদনের ক্ষুধা আছে, লোভ নেই। শু্যামামুন্দরী দুধের বাটিতে চিনি ঘেঁটে দিচ্ছিল। অমুজ্জল শু্যামবর্ণ, মোট বললে যা বোঝায় তা নয়, কিন্তু পরিপুষ্ট শরীর নিজেকে বেশ একটু যেন ঘোষণা করছে। একখানি সাদা শাড়ির বেশি গায়ে কাপড় নেই, কিন্তু দেখে মনে হয়, সর্বদাই পরিচ্ছন্ন। বয়স যৌবনের প্রায় প্রান্তে এসেছে, কিন্তু যেন জ্যৈষ্ঠের অপরাহের মতে, বেলা যায়-যায় তবু গোধূলির ছায় পড়ে নি। ঘন ভুরুর নীচে তীক্ষ কালে৷