পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ૨ઉ જે উঠল। যদিও সে ভাশুর, এবং কোনোদিন মেজোবউয়ের সঙ্গে একটা কথাও কয় নি, তবু তাকে ডেকে কুমু সম্বন্ধে যা-হয় কিছু একটা বলবার জন্যে মনটা ছটফট করতে লাগল। একবার বের হয়েও এল কিন্তু মোতির মা তখন নীচে চলে গিয়েছে। নববধূ-কর্তৃক পরিত্যক্ত শোবার ঘরে অকারণে অসময়ে একলা যাপন করবার অসম্মান থেকে রক্ষা পাবার জন্যে বাইরের দিকে বেগে গেল হন হন করে। মস্ত একটা জরুরি কাজ করবার ভান করে ডেস্কের উপর ঝুকে পড়ল। সামনে ছিল একখানা খাত। সাধারণত সেটা সে প্রায় দেখে না, দেখে তার আপিসের হেডবাবু। আজ লোকচক্ষুকে প্রতারণা করবার উদ্দেশ্যে সেটা খুলে বসল। এই খাতায় তার বাড়ির সমস্ত চিঠি ও টেলিগ্রাম রওনা করবার দিনক্ষণ টোকা থাকে। খাতা খুলে প্রথমেই দেখতে পেলে আজকের তারিখের টেলিগ্রামের ফর্দর মধ্যে বিপ্রদাসের নাম ও ঠিকানা । প্রেরক হচ্ছেন স্বয়ং কত্রীঠাকুরানী । “ডাকো দারোয়ানকে ৷” দণরোয়ান এল । “এ টেলিগ্রাম কে দিয়েছিল পাঠাতে ?” “মেজোবাৰু।” “ডাকো মেজোবাবুকে ।” মেজোবাৰু পাংশুবর্ণ মুখে এসে হাজির। “আমার হুকুম না নিয়ে টেলিগ্রাম পাঠাতে কে বললে ?” যে বলেছিল শাসন কর্তার সামনে তার নাম মুখে আন তো সহজ ব্যাপার নয় ; কী বলবে কিছুই ভেবে না পেয়ে নবীন ব্যাকুল হয়ে এই শীতের দিনে ঘেমে উঠল। নবীনকে নীরব দেখে মধুসূদন আপনিই জিজ্ঞাসা করলে, “মেজেবিউ বুঝি ?” মুখ হেঁট করে নিরুত্তর থাকাতেই তার উত্তর স্পষ্ট হল। বী করে মাথায় রক্ত গেল চড়ে, মুখ হল লাল টক্‌টকে— এত রাগ হল যে, কণ্ঠ দিয়ে কথা বেরোল না। সবেগে হাত নেড়ে নবীনকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে ইশারা করে ঘরের এক ধার থেকে আর-এক ধার পর্যন্ত পায়চারি করতে লাগল। \Ο ο নবীন ঘরে গিয়ে মুখ শুকনো করে মোতির মাকে বললে, “মেজোবউ, আর কেন ?” “হয়েছে কী ?” *