পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ & 4 والا তার নিজের দিকে ব্যর্থ প্রভুত্বের ক্রুদ্ধ অক্ষমতা, অন্য দিকে বধূর মনের মধ্যে অনমনীয় আত্মমর্যাদার সহজ প্রকাশ। সাধারণ মেয়েদের মতো তার ব্যবহারে কোথাও কিছুমাত্র অশোভন প্ৰগলভত দেখা গেল না। এ যদি না হত তা হলে তাকে অপমান করবার ষে-স্বামিত্ব তার আছে সেই অধিকার খাটাতে মধুসূদন লেশমাত্র দ্বিধা করত না। কিন্তু কী যে হল তা সে নিজে বুঝতেই পারে না ; কী একটা অদ্ভূত কারণে কুমুকে সে আপনার ধরাছোয়ার মধ্যে পেলে না। 轉 মধুসূদন মনে স্থির করলে, কুমুকে না জাগিয়ে সমস্ত রাত্রি ওর পাশে এমনি করে জেগে বসে থাকবে। কিছুক্ষণ বসে থেকে থেকে আর কিছুতেই থাকতে পারলে না— আস্তে আস্তে কুমুর বুকের উপর থেকে তার হাতটি নিজের হাতের উপর তুলে নিলে। কুমু ঘুমের ঘোরে উদখুস করে হাতটা টেনে নিয়ে মধুসূদনের উলটো দিকে পাশ ফিরে শুল । , মধুসূদন আর থাকতে পারলে না, কুমুর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললে, “বড়োবউ, তোমার দাদার টেলিগ্রাম এসেছে।” অমনি ঘুম ভেঙে কুমু দ্রুত উঠে বসল, বিস্মিত চোখ মেলে মধুসূদনের মুখের দিকে অবাক হয়ে রইল চেয়ে। মধুসূদন টেলিগ্রামটা সামনে ধরে বললে, “তোমার দাদার কাছ থেকে এসেছে।” ব’লে ঘরের কোণ থেকে লণ্ঠনটা কাছে নিয়ে এল। কুমু টেলিগ্রামটা পড়ে দেখলে, তাতে ইংরেজিতে লেখা আছে, “আমার জন্যে উদ্বিগ্ন হোয়ো না ; ক্রমশই সেরে উঠছি ; তোমাকে আমার আশীর্বাদ ।” কঠিন উদ্বেগের নিরতিশয় পীড়নের মধ্যে এই সাস্তুনার কথা পড়ে এক মুহূর্তে কুমুর চোখ ছল ছল করে উঠল। চোখ মুছে টেলিগ্রামখানি যত্ন করে আঁচলের প্রাস্তে বাধলে । সেইটেতে মধুসূদনের হৃৎপিণ্ডে যেন মোচড় লাগল। তার পরে কী যে বলবে কিছুই ভেবে পায় না। কুমুই বলে উঠল, "দাদার কি চিঠি আসে নি ?” এর পরে কিছুতেই মধুসূদন বলতে পারলে না যে চিঠি এসেছে। ধ। করে বলে ফেললে, “না, চিঠি তো নেই।” এই ঘরটার মধ্যে রাত্রে দুজনে এমন করে বসে থাকতে কুমুর সংকোচ বোধ হল। সে যখন উঠব-উঠব করছে, মধুসূদন হঠাৎ বলে উঠল, "বড়োবউ, আমার উপর রাগ কোরো না ।” এ তে প্রভুর উপরোধ নয়, এ যে প্রণয়ীর মিনতি, আর তার মধ্যে যেন আছে অপরাধীর আত্মগ্ননি। কুমু বিস্মিত হয়ে গেল, তার মনে হল এ দৈবেরই লীলা। কেননা, সে যে দিনের বেলা বারবার নিজেকে বলেছে, ‘তুই রাগ ○闘>b"