পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ २br> “একবার দেখোই না চেয়ে ।” মধুসূদন একে একে কৌটাে খুলে দেখালে। কুমু একটি কথাও বললে না। “এর যেটা তোমার পছন্দ সেইটেই তুমি পরতে পার।” “তুমি যেটা হুকুম করবে সেইটেই পরব।” “আমি তো মনে করি তিনটেই তিন আঙলে মানাবে।” “হুকুম কর তিনটেই পরব।” “আমি পরিয়ে দিই।” “দণও পরিয়ে।” মধুসূদন পরিয়ে দিলে। কুমু বললে, “আর কিছু হুকুম আছে ?” "বড়োবউ, রাগ করছ কেন ?” “আমি একটুও রাগ করছি নে।” বলে কুমু আবার ঘর থেকে চলে গেল । মধুসূদন অস্থির হয়ে বলে উঠল, “আহ, যাও কোথায় ? শোনো, শোনো।” কুমু তখনই ফিরে এসে বললে, “কী বলে।” ভেবে পেলে না কী বলবে। মধুস্থদনের মুখ লাল হয়ে উঠল। ধিক্কার দিয়ে বলে উঠল, “আচ্ছ। যাও।” রেগে বললে, “দণও আংটিগুলো ফিরিয়ে দাও।” তখনই কুমু তিনটে আংটি খুলে টিপায়ের উপর রাখলে। মধুসূদন ধমক দিয়ে বললে, “যাও চলে।” কুমু তখনই চলে গেল। এইবার মধুসূদন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করলে যে, সে আপিসে যাবেই। তখন কাজের সময় প্রায় উত্তীর্ণ। ইংরেজ কর্মচারীরা সকলেই চলে গেছে টেনিস খেলায়। উচ্চতন বড়োবাবুদের দল উঠি-উঠি করছে। এমন সময় মধুসূদন আপিসে উপস্থিত হয়ে একেবারে খুব কষে কাজে লেগে গেল। ছটা বাজল, সাতটা বাজল, আটটা বাজে, তখন খাতাপত্র বন্ধ করে উঠে পড়ল । \δο এতদিন মধুসূদনের জীবনযাত্রায় কখনও কোনো খেই ছিড়ে যেত না। প্রতি দিনের প্রতি মুহূর্তই নিশ্চিত নিয়মে বাধা ছিল। আজ হঠাৎ একটা অনিশ্চিত এসে সব গোলমাল বাধিয়ে দিয়েছে। এই-যে আজ আপিস থেকে বাড়ির দিকে চলেছে, রাত্তিরটা যে ঠিক কী ভাবে প্রকাশ পাবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। মধুসূদন