পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२88 রবীন্দ্র-রচনাবলী যোগ্য, তাই কোনো বিরুদ্ধ তর্ক না তুলে বললে, “যে মেয়ে সেই কোঁটাে খুজে বের করে সি দুরটিপ কপালে পরবে সে হবে রাজরানী।” “সর্বনাশ ! কোনো হতভাগিনী খবর পেয়েছে নাকি ?” “সেজোপিসিমার মেয়ে খুদি জানে। ঝুড়ি নিয়ে ছন্ন, যখন সকালে কয়লা বের করতে যায়, রোজ খুদি সেইসঙ্গে যায়— ও একটুও ভয় করে না।” “ও যে ছেলেমানুষ, তাই রাজরানী হতেও ভয় নেই।” বাইরে ঠাণ্ড উত্তরে হাওয়া দিচ্ছিল তাই মোতিকে নিয়ে কুমু ঘরে গেল ; সেখানে সোফায় বসে ওকে কোলে তুলে নিলে। পাশের তেপাইয়ে ছোটাে রুপোর থালিতে ছিল শীতকালের ফুল— গীদ, কুন্দ, দোপাটি, জবা। প্রতিদিনের জোগানমত এই ফুলই মালীর তোলা। কুমু ছাদের কোণে বসে স্বর্যোদয়ের দিকে মুখ করে দেবতাকে উৎসর্গ করে দেবে বলে এরা অপেক্ষা করে আছে। আজ তার সেই অনিবেদিত ফুল থালামৃদ্ধ নিয়ে সে হাবলুর কাছে ধরল ; বললে, “নেবে ফুল ?” “হা, নেব।” “কী করবে বলে তো ?” “পুজো-পুজো খেলব।” কুমুরকোমরে একটা সিস্কের রুমাল গোজ ছিল, সেইটেতে ফুলগুলি বেঁধে দিয়ে ওকে চুমে খেয়ে বললে, “এই নাও।” মনে মনে ভাবলে, “আমারও পুজে-পুজো খেলা হল। বললে, “গোপাল, এর মধ্যে কোন ফুল তোমার সবচেয়ে ভালো লাগে, বলে তো ?” হাবলু বললে, “জব ।” “কেন জবা ভালো লাগে বলব ?” “বলে দেখি ।” “ও ষে ভোর না হতেই জটাইবুড়ির সিছরের কোঁটে থেকে রঙ চুরি করেছে।” হাবলু খানিকক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে ভাবলে। হঠাৎ বলে উঠল, “জ্যাঠাইমা, জবাফুলের রঙ ঠিক তোমার শাড়ির এই লাল পাড়ের মতো।” এইটুকুতে ওর মনের সব কথা বলা হয়ে গেল। এমন সময় হঠাৎ পিছনে দেখে মধুসূদন। পায়ের শব্দ পাওয়া যায় নি। এখন অন্তঃপুরে আসবার সময় নয়। এই সময়টাতে বাইরের আপিসঘরে ব্যাবসাঘটিত কর্মের যত উচ্ছিষ্ট পরিশিষ্ট এসে জোটে ; এই সময় দালাল আসে, উমেদার আসে, যত রকম খুচরো খবর ও কাগজপত্র নিয়ে সেক্রেটারি আসে। আসল কাজের চেয়ে এই-সব উপরি-কাজের ভিড় কম নয়।