২৯৮ রবীন্দ্র-রচনাবলী “যদি এসে থাকে, খাওয়ার পরে দুপুরবেলা নিজেই নিয়ে আসব।” কুমু অধৈর্য দমন করে নীরবে সম্মত হল। তখন আর-একবার মধুসুদন কুমুর হাতখানা টেনে নেবার উপক্রম করছে এমন সময় শু্যামা হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকেই বলে উঠল, “ওমা, ঠাকুরপো যে!” বলেই বেরিয়ে যেতে উষ্ঠত। 疊 মধুসুদন বললে, “কেন, কী চাই তোমার ?” “বউকে ভাড়ারে ডাকতে এসেছি। রাজরানী হলেও ঘরের লক্ষ্মী তো বটে ; তা আজ না-হয় থাক।” মধুসূদন সোফা থেকে উঠে কোনো কথা না বলে দ্রুত বাইরে চলে গেল । আহারের পর যথারীতি শোবার ঘরের খাটে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে পান চিবোতে চিবোতে মধুসুদন কুমুকে ডেকে পাঠালে। তাড়াতাড়ি কুমু চলে এল। সে জানে আজ দাদার চিঠি পাবে। শোবার ঘরে ঢুকে খাটের পাশে দাড়িয়ে রইল। মধুসূদন গুড়গুড়ির নলটা রেখে পাশে দেখিয়ে দিয়ে বললে, “বোসে।” কুমু বসল। মধুসুদন তাকে যে চিঠি দিলে তাতে কেবল এই কয়টি কথা আছে— প্রাণপ্রতিমাস্থ শুভাশীর্বাদরাশয়ঃ সন্তু Ψ চিকিৎসার জন্য শীঘ্রই কলিকাতায় যাইতেছি । সুস্থ হইলে তোমাকে দেখিতে যাইব । গৃহকর্মের অবকাশমত মাঝে মাঝে কুশলসংবাদ দিলে নিরুদ্বিগ্ন হই । 嘯 এই ছোটো চিঠিটুকু মাত্র পেয়ে কুমুর মনে প্রথমে একটা ধাক্কা লাগল। মনে মনে বললে, ‘পর হয়ে গেছি। অভিমানটা প্রবল হতে না হতেই মনে এল, ‘দাদার হয়তো শরীর ভালো নেই, আমার কী ছোটো মন ! নিজের কথাটাই সব-আগে মনে পড়ে।’ মধুসূদন বুঝতে পারলে কুমু উঠি-উঠি করছে ; বললে, “যাচ্ছ কোথায়, একটু বোসো ।” () কুমুকে তে বসতে বললে, কিন্তু কী কথা বলবে মাথায় আসে না। অবিলম্বে কিছু বলতেই হবে, তাই সকাল থেকে যে কথাটা নিয়ে ওর মনে খটকা রয়েছে সেইটেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল। বললে, “সেই এলাচদণনার ব্যাপারটা নিয়ে এত হাঙ্গামা করলে কেন ? ওতে লজ্জার কথা কী ছিল ?”
- ও আমার গোপন কথা।”