পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిes রবীন্দ্র-রচনাবলী নবীন মশারির চালের উপর থেকে চাবি তুলে নিয়ে কুমুর হাতে দিয়ে বললে, *আর কাউকে দিয়ে না বউদিদি, দেখব আর কেউ তোমার সঙ্গে কী রকম ব্যবহার করেন ।” i . . 品牌 কুমু বইয়ের পাতা ওলটাতে ওলটাতে বললে, “এই বইয়ে বুঝি ঠাকুরপোর শখ ?” “ওঁর শখ নেই এমন বই নেই। সেদিন দেখি কোথা থেকে একথানা গো-পালন জুটিয়ে নিয়ে পড়তে বসে গেছেন।” , - "নিজের দেহরক্ষার জন্যে ওটা পড়ি নে, অতএব এতে লজ্জার কারণ কিছু নেই।” “দিদি, তোমার কী একটা কথা বলবার আছে। চাও তে, এই বাচালটিকে এখনই বিদায় করে দিই।” "না, তার দরকার নেই। আমার দাদা দুই-একদিনের মধ্যে আসবেন শুনেছি।” নবীন বললে, “হা, তিনি কালই আসবেন।” “কাল!” বিস্মিত হয়ে কুমু খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল। নিশ্বাস ফেলে, বললে, “কী করে তার সঙ্গে দেখা হবে ?” মোতির মা জিজ্ঞাসা করলে, “তুমি বড়োঠাকুরকে কিছু বল নি ?” কুমু মাথা নেড়ে জানালে যে, না। নবীন বললে, “একবার বলে দেখবে না ?” কুমু চুপ করে রইল। মধুসূদনের কাছে দাদার কথা বলা বড়ো কঠিন। দাদার প্রতি অপমান ওর ঘরের মধ্যে উদ্যত ; তাকে একটুও নাড়া দিতে ওর অসহ্য সংকোচ । কুমুর মুখের ভাব দেখে নবীনের মন ব্যথিত হয়ে উঠল। বললে, “ভাবনা কোরো না বউদিদি, আমরা সব ঠিক করে দেব, তোমাকে কিছু বলতে কইতে হবে না।” । দাদার কাছে নবীনের শিশুকাল থেকে অত্যন্ত একটা ভীরুতা আছে। বউদিদি এসে আজ সেই ভয়টা ওর মন থেকে ভাঙালে বুঝি ! h কুমু চলে গেলে মোতির মা নবীনকে বললে, “কী উপায় করবে বলে দেখি ? সেদিন রাত্রে তোমার দাদা যখন আমাদের ডেকে নিয়ে এসে বউয়ের কাছে নিজেকে, খাটো করলেন তখনই বুঝেছিলুম সুবিধে হল না। তার পর থেকে তোমাকে দেখলেই তো মুখ ফিরিয়ে চলে যান।” f "দাদা বুঝেছেন যে, ঠকা হল ; ঝোকের মাথায় থলি উজাড় করে আগাম দান দেওয়া হয়ে গেছে, এদিকে ওজনমত জিনিস মিলল না। আমরা ওঁর বোকামির সাক্ষী ছিলুম তাই আমাদের সইতে পারছেন না।” । . . ;