পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ ৩০ ৭ খাটে না। সেদিন তেরোস্পর্শে বেরিয়ে তোমাদের ছোটোসাহেব ঘোড়দৌড়ে বাজি জিতে এল— আমি হলে বাজি জেতা দুরস্তাং ঘোড়াটা ছিটকে এসে আমার পেটে লাথি মেরে যেত। দাদা, এই সব গ্রহনক্ষত্রের হিসেবের উপর তোমাদের বুদ্ধি খাটাতে যেয়ে না; একটু বিশ্বাস মনে রেখো।” মধুসূদন খুশি হয়ে স্মিতহাস্তে গুড়গুড়িতে মনোযোগ দিলে। পরদিন সকাল সাতটার মধ্যে মধুসূদন নবীনের সঙ্গে এক সরু গলির আবর্জনার ভিতর দিয়ে বেঙ্কট শাস্ত্রীর বাসায় গিয়ে উপস্থিত। অন্ধকার একতলার ভাপসা ঘর ; লোনাধরা দেয়াল ক্ষতবিক্ষত, যেন সাংঘাতিক চর্মরোগে আক্রাস্ত, তক্তপোশের উপর ছিন্ন মলিন একখানা শতরঞ্চ, এক প্রাস্তে কতকগুলো পুথি এলোমেলো জড়োকরা, দেয়ালের গায়ে শিবপার্বতীর এক পট । নবীন ইণক দিলে, “শাস্ত্রীজি” । ময়ল ছিটের বালাপোশ গায়ে, সামনের মাথা কামানে, বা টিওআল, কালে বেঁটে .রোগ এক ব্যক্তি ঘরে এসে ঢুকল ; নবীন তাকে ঘটা করে প্রণাম করলে। চেহার দেখে মধুসূদনের একটুও ভক্তি হয় নি— কিন্তু দৈবের সঙ্গে দৈবজ্ঞের কোনোরকম ঘনিষ্ঠত অাছে জেনে ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি একটা আধাআধি রকম অভিবাদন সেরে নিলে। নবীন মধুসূদনের একটি ঠিকুজি জ্যোতিষীর সামনে ধরতেই সেটা অগ্রাহ করে শাস্ত্রী মধুসূদনের হাত দেখতে চাইলে। কাঠের বাক্স থেকে কাগজ-কলম বের করে নিয়ে নিজে একটা চক্র তৈরি করে নিলে। মধুসূদনের মুখের দিকে চেয়ে বললে, “পঞ্চম বর্গ।” মধুসূদন কিছুই বুঝলে না। জ্যোতিষী আঙলের পর্ব গুনতে গুনতে আউড়ে গেল, কবর্গ, চবৰ্গ, টবর্গ, তবর্গ, পবর্গ। এতেও মধুসূদনের বুদ্ধি খোলস হল না। জ্যোতিষী বললে, “পঞ্চম বর্ণ।” মধুসূদন ধৈর্য ধরে চুপ করে রইল। জ্যোতিষী আওড়াল, প, ফ ব ভ ম । মধুসূদন এর থেকে এইটুকু বুঝলে যে, ভৃগুমুনি ব্যাকরণের প্রথম অধ্যায় থেকেই তার সংহিতা শুরু করেছেন। এমন সময় বেঙ্কট শাস্ত্রী বলে উঠল, “পঞ্চাক্ষরকং।” নবীন চকিত হয়ে মধুসূদনের কাছে চুপি চুপি বললে, “বুঝেছি দাদা।” “की বুঝলে ?” “পঞ্চম বর্গের পঞ্চম বর্ণম, তার পরে পঞ্চ অক্ষর ম-ধু-স্ব-দ-ন। জন্ম-গ্রহের অদ্ভূত কৃপায় তিনটে পীচ এক জায়গায় মিলেছে।” মধুসূদন স্তম্ভিত । বাপ মায়ে নাম রাখবার কত হাজার বছর আগেই নামকরণ ভৃগুমুনির খাতায় ! নক্ষত্রদের এ কী কাও ! তার পরে হতবুদ্ধি হয়ে শুনে গেল ওর জীবনের সংক্ষিপ্ত অতীত ইতিহাস সংস্কৃত ভাষায় রচিত। ভাষা যত কম বুঝলে,