পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\OS o রবীন্দ্র-রচনাবলী সেই পট আজ ও নষ্ট করে ফেলতে চায়। যেন চীৎকার করে বলতে চায়, তোমাকে আমি একটুও বিশ্বাস করি নে। হাত কঁপিছে, তাই গ্রন্থি খুলতে পারছে নী ; টানাটানিতে সেটা আরও অঁাট হয়ে উঠল, অধীর হয়ে দণত দিয়ে ছিড়ে ফেললে। অমনি চিরপরিচিত সেই মূর্তি অনাবৃত হতেই আর সে থাকতে পারলে না ; তাকে বুকে চেপে ধরে কেঁদে উঠল। কাঠের ফ্রেম বুকে যত বাজে ততই আরও বেশি চেপে ধরে । এমন সময়ে শোবার ঘরে এল মুরলী বেহার বিছানা করতে। শীতে কঁপিছে তার হাত । গায়ে একখান জীর্ণ ময়ল র্যাপার। মাথায় টাক, রগ টেপা, গাল বসা, কিছুকালের না-কামানে কাচাপাকা দাড়ি খোচা খোচা হয়ে উঠেছে। অনতিকাল পূর্বেই সে ম্যালেরিয়ায় ভুগেছিল, শরীরে রক্ত নেই বললেই হয়, ডাক্তার বলেছিল কাজ ছেড়ে দিয়ে দেশে যেতে, কিন্তু নিষ্ঠুর নিয়তি। কুমু বললে, “শীত করছে মুরলী ?” “ই মা, বাদল করে ঠাণ্ড পড়েছে।” “গরম কাপড় নেই তোমার ?” “খেতাব পাবার দিনে মহারাজা দিয়েছিলেন, নাতির খাসির বেমারি হতেই ডাক্তারের কথায় তাকে দিয়েছি মা ।” কুমু একটি পুরোনো ছাই রঙের আলোয়ান পাশের ঘরের আলমারি থেকে বের করে এনে বললে, “আমার এই কাপড়টি তোমাকে দিলুম।” মুরলী গড় হয়ে বললে, “মাপ করে মা, মহারাজা রাগ করবেন।” কুমুর মনে পড়ে গেল, এ বাড়িতে দয়া করবার পথ সংকীর্ণ। কিন্তু ঠাকুরের কাছ থেকে নিজের জন্যেও যে ওর দয়া চাই, পুণ্যকর্ম তারই পথ। কুমু ক্ষোভের সঙ্গে আলোয়ানট মাটিতে ফেলে দিলে । o: মুরলী হাত জোড় করে বললে, “রানীমা, তুমি মা লক্ষ্মী, রাগ কোরে না। গরম কাপড়ে আমার দরকার হয় না। আমি থাকি হকাবরদারের ঘরে, সেখানে গামলায় গুলের আগুন, আমি বেশ গরম থাকি।” কুমু বললে, “মুরলী, নবীন ঠাকুরপে যদি বাড়ি এসে থাকেন তাকে ডেকে দাও।” নবীন ঘরে ঢুকতেই কুমু বললে, “ঠাকুরপো, তোমাকে একটি কাজ করতেই হবে। বলো, করবে ?” “নিজের অনিষ্ট যদি হয় এখনই করব, কিন্তু তোমার অনিষ্ট হলে কিছুতেই করব बां ।’