পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ । \లిS) “আমার আর কত অনিষ্ট হবে ? অামি ভয় করি নে।” বলে নিজের হাত থেকে মোটা সোনার বালাজোড়া খুলে বললে, “আমার এই বালা বেচে দাদার জন্যে স্বস্ত্যয়ন করাতে হবে।” “কিছু দরকার হবে না, বউরানী, তুমি তাকে যে ভক্তি করে তারই পুণ্যে প্রতিমুহূর্তে র্তার জন্তে স্বস্ত্যয়ন হচ্ছে।” * “ঠাকুরপো, দাদার জন্যে আর কিছুই করতে পারব না। কেবল যদি পারি দেবতার দ্বারে তার জন্যে সেবা পৌছিয়ে দেব।” ዥ.. “তোমাকে কিছু করতে হবে না, বউরানী। আমরা সেবক আছি কী করতে ?” “তোমরা কী করতে পার বলে ?” “আমরা পাপিষ্ঠ, পাপ করতে পারি। তাই করেও যদি তোমার কোনো কাজে লাগি তা হলে ধন্য হব।” • “ঠাকুরপো, এ কথা নিয়ে ঠাট্টা কোরে না।” “একটুও ঠাট্ট নয়। পুণ্য করার চেয়ে পাপ করা অনেক শক্ত কাজ, দেবতা যদি তা বুঝতে পারেন তা হলে পুরস্কার দেবেন।” নবীনের কথার ভাবে দেবতার প্রতি উপেক্ষ কল্পনা করে কুমুর মনে স্বভাবত আঘাত লাগতে পারত, কিন্তু তার দাদাও যে মনে মনে দেবতাকে শ্রদ্ধা করে না, এই অভক্তির পরে সে রাগ করতে পারে না যে। ছোটো ছেলের দুষ্ট মির পরেও মায়ের যেমন সকৌতুক স্নেহ, এই রকম অপরাধের পরে ওরও সেই ভাব। কুমু একটু স্নান হাসি হেসে বললে, “ঠাকুরপো, সংসারে তোমরা নিজের জোরে কাজ করতে পার ; আমাদের যে সেই নিজের জোর খাটাবার জো নেই। যাদের ভালোবাসি অথচ নাগলি মেলে না, তাদের কাজ করব কী করে ? দিন যে কাটে না, কোথাও যে রাস্তা খুজে পাই নে। আমাদের কী দয়া করবার কোথাও কেউ নেই ?’ : , , * . নবীনের চোখ জলে ভেসে উঠল। , “দাদাকে উদ্দেশ করে আমাকে কিছু করতেই হবে ঠাকুরপো, কিছু দিতেই হবে। এই বালা আমার মায়ের, সেই আমার মায়ের হয়েই এ বালা আমার দেবতাকে আমি দেব ।” “দেবতাকে হাতে করে দিতে হয় না বউরানী, তিনি এমনি নিয়েছেন। দুদিন অপেক্ষ করে, যদি দেখ তিনি প্রসন্ন হন নি, তা হলে যা বলবে তাই করব। যে দেবতা তোমাকে দয়া করেন না তাকেও ভোগ দিয়ে আসব।”