পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७s8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আজ ওর মনে যে একটা আলো জলেছে তাতে দেখবার শক্তি হয়েছে প্রবল, কুমু সম্বন্ধে চিত্তের স্পৰ্শবোধ হয়েছে সূক্ষ্ম। আজকের দিনেও কুমুর মনে এই বিমুখত, এটা ওর কাছে নিষ্ঠুর অবিচার বলে ঠেকল। তবু মনে মনে পণ করলে বিচলিত হবে না, কিন্তু যা সহজে হতে পারত সে অার সহজ রইল না। একটু চুপ করে থেকে মধুসূদন বললে, "বড়োবউ, চলে যেতে ইচ্ছে করছ ? একটুক্ষণ থাকবে না ?” মধুসূদনের কথা আর তার গলার স্বর শুনে কুমু বিস্মিত। বললে, “ন, যাব কেন ?” “তোমার জন্যে একটি জিনিস এনেছি খুলে দেখো।” বলে তার হাতে ছোটে একটি সোনার কোঁটো দিলে। কোঁটাে খুলে কুমু দেখলে দাদার দেওয়া সেই নীলার আংটি। বুকের মধ্যে ধক করে উঠল, কী করবে ভেবে পেল না। “এই আংটি তোমায় পরিয়ে দিতে দেবে ?” কুমু হাত বাড়িয়ে দিলে। মধুসূদন কুমুর হাত কোলের উপর ধরে খুব আস্তে আস্তে আংটি পরাতে লাগল। ইচ্ছে করেই সময় নিলে একটু বেশি। তার পরে হাতটি তুলে ধরে চুমে খেলে, বললে, “ভুল করেছিলুম তোমার হাতের আংটি খুলে নিয়ে। তোমার হাতে কোনো জহরতে কোনো দোষ নেই।” কুমুকে মারলে এর চেয়ে কম বিস্মিত হত। ছেলেমানুষের মতো কুমুর এই বিস্ময়ের ভাব দেখে মধুসূদনের লাগল ভালো। দানটা যে সামান্য নয় কুমুর মুখভাবে তা স্বম্পষ্ট। কিন্তু মধুসুদন আরও কিছু হাতে রেখেছে, সেইটে প্রকাশ করলে ; বললে, “তোমাদের বাড়ির কালু মুখুজ্যে এসেছে, তাকে দেখতে চাও ?” কুমুর মুখ উজ্জল হয়ে উঠল। বললে, “কালুদা !” “তাকে ডেকে দিই। তোমরা কথাবার্তা কও, ততক্ষণ আমি খেয়ে আসি গে।” কৃতজ্ঞতায় কুমুর চোখ ছল ছল করে এল। 8 ○ চাটুজ্যে জমিদারদের সঙ্গে কালুর পুরুষানুক্রমিক সম্বন্ধ। সমস্ত বিশ্বাসের কাজ এর হাত দিয়েই সম্পন্ন হয়। এর কোনো এক পূর্বপুরুষ চাটুজ্যেদের জন্যে জেল খেটেছে। কালু আজ বিপ্রদাসের হয়ে এক কিস্তি স্বদ দিয়ে রসিদ নিতে