পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|రిన 6 রবীন্দ্র-রচনাবলী কুমু যদি বলত কিছু চাই নে, সেও ছিল ভালো, কিন্তু মুরলী বেহারার জন্যে গায়ের কম্বল! যে দিতে পারে মাথার মুকুট, তার কাছে চাওয়া জুতোর ফিতে ! মধুসূদন অবাক। রাগ হল বেহারাটার উপর। বললে, “লক্ষ্মীছাড়া মুরলী বুঝি তোমাকে বিরক্ত করছে ?” o “না আমি আপনিই ওকে একটা আলোয়ান দিতে গেলুম, ও নিল না। তুমি যদি হুকুম কর তবে সাহস করে নেবে।” মধুসূদন স্তব্ধ হয়ে রইল। খানিক পরে বললে, “ভিক্ষে দিতে চাও! আচ্ছা দেখি, কই তোমার আলোয়ান ?” কুমু তার সেই অনেক দিনের পরা বাদামি রঙের আলোয়ান নিয়ে এল। মধুসূদন সেটা নিয়ে নিজের গায়ে জড়াল। টিপায়ের উপরকার ছোটো ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে একজন বুড়ি দাসী এল ; তাকে বললে, “মুরলী বেহারাকে ডেকে দাও।” মুরলী এসে হাত জোড় করে দাড়াল ; শীতে ও ভয়ে তার জোড়া হাত কঁপিছে। . “তোমার মাজি তোমাকে বকশিশ দিয়েছেন”, বলে মধুসুদন পকেট-কেস থেকে একশো টাকার একটা নোট বের করে তার ভাজ খুলে সেটা দিলে কুমুর হাতে। এরকম অকারণে অযাচিত দান মধুসূদনের দ্বারা জীবনে কখনও ঘটে নি। অসম্ভব ব্যাপারে মুরলী বেহারার ভয় আরও বেড়ে উঠল, দ্বিধাকম্পিত স্বরে বললে, ‘‘gga-’’ “হুজুর কী রে বেটী! বোকা, নে তোর মায়ের হাত থেকে। এই টাকা দিয়ে যত খুশি গরম কাপড় কিনে নিস।” ব্যাপারটা এইখানে শেষ হল— সেই সঙ্গে সেদিনকার আর সমস্তই যেন শেষ হয়ে গেল। যে স্রোতে কুমুর মন ভেসেছিল সে গেল হঠাৎ বন্ধ হয়ে, মধুসূদনের মনে আত্মত্যাগের যে ঢেউ চিত্তসংকীর্ণতার কুল ছাপিয়ে উঠেছিল তাও সামান্য বেহারার জন্য তুচ্ছ প্রার্থনায় ঠেকে গিয়ে আবার তলায় গেল নেমে। এর পরে সহজে কথাবার্তা কওয়া দুই পক্ষেই অসাধ্য । আজ সন্ধের সময় সেই তালুক-কেন ব্যাপার নিয়ে লোক এসে বাইরের ঘরে অপেক্ষা করছে, এ কথাটা মধুসূদনের মনেই ছিল না। এতক্ষণ পরে চমকে উঠে ধিক্কার হল নিজের উপরে। উঠে দাড়িয়ে বললে, “কাজ আছে, আসি।” দ্রুত চলে গেল । পথের মধ্যে শু্যামামুন্দরীর ঘরের সামনে এসে বেশ প্রকাশু কণ্ঠস্বরেই বললে, “ঘরে আছ ?” খামান্বন্দরী আজ খায় নি ; একটা র্যাপার মুড়ি দিয়ে মেজেয় মাছুরের উপর