পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VOS) o রবীন্দ্র-রচনাবলী নবীন বললে, “খেয়ে বেরোবে না ? রাত হয়ে আসছে।” “বাইরেই খাব, কাজ অাছে।” নবীন মাথা হেঁট করে ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে এল। সে যে কৌশল করেছিল ফেসে গেল বুঝি । so হঠাৎ মধুস্থদন নবীনকে ফিরে ডেকে বললে, “এই চিঠিখান কুমুকে দিয়ে এসো।” নবীন দেখলে বিপ্রদাসের চিঠি। বুঝলে এ চিঠি আজ সকালেই এসেছে, সন্ধেবেলায় নিজের হাতে কুমুকে দেবে বলে মধুসূদন রেখেছিল। এমনি করে প্রত্যেকবার মিলন উপলক্ষে একটা-কিছু অর্ঘ্য হাতে করে আনবার ইচ্ছে। আজ আপিসের কাজে হঠাৎ তুফান উঠে তার এই আদরের আয়োজনটুকু গেল ডুবে । মাদ্রাজে যে ব্যাঙ্ক ফেল করেছে সেটার উপরে সাধারণের নিশ্চিত আস্থা ছিল। তার সঙ্গে ঘোষাল-কোম্পানির যে যোগ সে সম্বন্ধে অধ্যক্ষদের বা অংশিদারদের কারও মনে কিছুমাত্র সংশয় ছিল না। যেই কল বিগড়ে গেল অমনি অনেকেই বলাবলি করতে আরম্ভ করলে যে, আমরা গোড়া থেকেই ঠাউরেছিলুম, ইত্যাদি। সাংঘাতিক আঘাতের সময় ব্যাবসাকে যখন একজোট হয়ে রক্ষার চেষ্টা দরকার, সেই সময়েই পরাজয়ের সম্বন্ধে দোষারোপ প্রবল হয়ে ওঠে এবং যাদের প্রতি কারও ঈর্ষা আছে তাদেরকে অপদস্থ করবার চেষ্টায় টলমলে ব্যাবসাকে কাত করে ফেলা হয়। সেইরকম চেষ্টা চলবে মধুসূদন তা বুঝেছিল। মাদ্রাজ-ব্যাঙ্কের বিপর্যয়ে ঘোষালকোম্পানির লোকসানের পরিমাণ যে কতটা দাড়াবে এখনও তা নিশ্চিত জানবার সময় হয় নি, কিন্তু মধুসূদনের প্রতিপত্তি নষ্ট করবার আয়োজনে এও যে একটা মসলা জোগাবে তাতে সন্দেহ ছিল না। যাই হোক, সময় খারাপ, এখন অন্য সব কথা ভুলে এইটেতেই মধুসূদনকে কোমর বাধতে হবে। রাত্রে মধুসূদনের সঙ্গে আলাপ হবার পর নবীন ফিরে এসে দেখলে কুমুর সঙ্গে মোতির মার তখনও কথা চলছে। নবীন বললে, “বউরানী, তোমার দাদার চিঠি আছে।” কুমু চমকে উঠে চিঠিখানা নিলে। খুলতে হাত কাপতে লাগল। ভয় হল হয়তো কিছু অপ্রিয় সংবাদ আছে। হয়তো এখন আসাই হবে না। খুব ধীরে ধীরে খাম খুলে পড়ে দেখলে। একটু চুপ করে রইল। মুখ দেখে মনে হল যেন কোথায় ব্যথা বেজেছে । নবীনকে বললে, “দাদা আজ বিকেলে তিনটের সময় কলকাতায় এসেছেন।”

  • আজই এসেছেন। র্তার তো—”