পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\©ა8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মধুসূদন হঠাৎ বেঁকে উঠে বলে উঠল, “না না।” নবীন তাতেও না দমে বললে, “তিনি যে তোমার কাছে দরবার করবেন বলে বসে আছেন।” রুক্ষস্বরে মধুসূদন বললে, “এখন দরবারের সময় নেই।” “তোমার তো সময় নেই দাদা, তারও তো সময় কম।” “কী, হয়েছে কী ?” “বিপ্রদাসবাবু আজ কলকাতায় এসেছেন খবর পাওয়া গেছে, তাই বউরানী কাল rTagical-** “সকালে যেতে চান ?” “বেশিক্ষণের জন্যে না, একবার কেবল—” মধুসুদন হাত বাকানি দিয়ে উঠে বললে, “তা যান-না, যান। বাস, আর নয়, তুমি যাও।” § হুকুম আদায় করেই নবীন ঘর থেকে এক দৌড়। বাইরে আসতেই মধুসূদনের ডাক কানে এসে পৌঁছোল, “নবীন।” ভয় লাগল আবার বুঝি দাদ। হুকুম ফিরিয়ে নেয়। ঘরে এসে দাড়াতেই মধুসূদন বললে, “বড়োবউ এখন কিছুদিন তার দাদার ওখানে গিয়েই থাকবেন, তুমি তার জোগাড় করে দিয়ে ।” নবীনের ভয় লাগল, দাদার এই প্রস্তাবে তার মুখে পাছে একটুও উৎসাহ প্রকাশ পায়। এমন-কি, সে একটু দ্বিধার ভাব দেখিয়ে মাথা চুলকোতে লাগল। বললে, “বউরানী গেলে বাড়িট বড়ো খালি-খালি ঠেকবে।” মধুসূদন কোনো উত্তর না করে গুড়গুড়ির নলটা নামিয়ে রেখে কাজে লেগে গেল। বুঝতে পারলে প্রলোভনের রাস্ত এখনও খোলা আছে– ওদিকে একেবারেই না। নবীন আনন্দিত হয়ে চলে গেল। মধুসূদনের কাজ চলতে লাগল। কিন্তু কখন এই কাজের ধারার পাশ দিয়ে আর-একটা উলটো মানস-ধারা খুলে গেছে তা সে অনেকক্ষণ নিজেই বুঝতে পারে নি। এক সময়ে নীল পেনসিল প্রয়োজন শেষ না হতেই ছুটি নিল, গুড়গুড়ির নলটা উঠল মুখে। দিনের বেলায় মধুসূদনের মনটা কুমুর ভাবনা সম্বন্ধে যখন সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি নিয়েছিল, তখন আগেকার দিনের মতো নিজের পরে নিজের একাধিপত্য ফিরে পেয়ে মধুসূদন খুব আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু যত রাত হচ্ছে ততই সন্দেহ হতে লাগল যে, শক্র দুর্গ ছেড়ে পালায় নি। স্থড্রঙ্গের ঘরে আছে গা ঢাকা দিয়ে ।