পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ H6 S কারণ ঘটেছে ; তার অনতিপরেই কিছুদিন ধরে বিপরীত দিক থেকে মধুসূদন প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছে ওর জীবনে মেয়েরা একেবারেই হেয় । তাই এতকাল শু্যামান্বন্দরী নিজেকে খুবই সংযত করে রেখেছিল। মধুস্থদমের বিয়ের পর থেকে সে আর থাকতে পারছিল না। কুমুকে মধুসূদন যদি অন্য সাধারণ মেয়ের মতোই অবজ্ঞা করত, তা হলে সেটা একরকম সহ হত। কিন্তু তাম যখন দেখলে রাশ আলগা দিয়ে মধুসূদনও কোনো মেয়েকে নিয়ে অন্ধবেগে মেতে উঠতে পারে, তখন সংযম রক্ষা তার পক্ষে আর সহজ রইল না। এ কয়দিন সাহস করে যখন তখন একটু একটু এগিয়ে আসছিল, দেখেছিল এগিয়ে আসা চলে। মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প বাধা পেয়েছে কিন্তু সেও দেখলে কেটে যায়। মধুসূদনের দুর্বলতা ধরা পড়েছে, সেইজন্যেই খামার নিজের মধ্যেও ধৈর্য বাধ মানতে আর পারে না। কুমু চলে আসবার আগের রাত্রে মধুসূদন খামাকে যত কাছে টেনেছিল এমন তো আর কখনোই হয় নি। তার পরেই ওর ভয় হল পাছে উলটো ধাক্কাট জোরে এসে লাগে। কিন্তু এটুকু শু্যামা বুঝে নিয়েছে যে, ভীরুতা যদি না করে তবে ভয়ের কারণ আপনি কেটে যাবে। সকালেই মধুসূদন বেরিয়ে গিয়েছিল, বেলা একটা পেরিয়ে বাড়ি এসেছে। ইদানীং অনেক কাল ধরে ওর স্নানাহারের নিয়মের এমন ব্যতিক্রম ঘটে নি । আজ বড়োই ক্লাস্ত অবসন্ন হয়ে বাড়িতে যেই এল, প্রথম কথাই মনে হল, কুমু তার দাদার ওখানে চলে গেছে এবং খুশি হয়েই চলে গেছে। এতকাল মধুসুদন আপনাতে আপনি খাড়া ছিল, কখন এক সময়ে ঢিল দিয়েছে, শরীরমনের আতুরতার সময় কোনো মেয়ের ভালোবাসাকে আশ্রয় করবার সুপ্ত ইচ্ছ। ওর মনে উঠেছে জেগে, সেইজন্যেই অনায়াসে কুমুর চলে যাওয়াতে ওর এমন ধিক্কার লাগল। আজ ওর খাবার সময়ে শু্যামাসুন্দরী ইচ্ছা করেই কাছে এসে বসে নি ; কী জানি কাল রাত্রে নিজেকে ধরা দেবার পরে মধুসুদন নিজের উপর পাছে বিরক্ত হয়ে থাকে। খাবার পর মধুসুদন শূন্ত শোবার ঘরে এসে একটুখানি চুপ করে থাকল, তার পরে নিজেই শু্যামাকে ডেকে পাঠালে। শু্যামা লাল রঙের একটা বিলিতি শাল গায়ে দিয়ে যেন একটু সংকুচিতভাবে ঘরে ঢুকে একধারে নতনেত্রে দাড়িয়ে রইল। মধুসূদন ডাকলে, “এসে, এইখানে এসো, বসে।” খাম শিয়রের কাছে বসে “তোমাকে ষে বড়ো রোগ দেখাচ্ছে আজ” বলে একটু ঝুকে পড়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।