পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫২ রবীন্দ্র-রচনাবলী মধুস্বদন বললে, “আঃ, তোমার হাত বেশ ঠাণ্ডা।” রাত্রে মধুসূদন যখন শুতে এল শুামামুন্দরী অনাহূত ঘরে ঢুকে বললে, “আহা, তুমি একল ।” খামান্বন্দরী একটু যেন স্পর্ধার সঙ্গেই কোনো আর আবরণ রাখতে দিলে না। যেন অসংকোচে সবাইকে সাক্ষী রেখেই ও আপনার অধিকার পাক করে তুলতে চায়। সময় বেশি নেই, কবে আবার কুমু এসে পড়বে, তার মধ্যে দখল সম্পূর্ণ হওয়া চাই। দখলটা প্রকাশ হলে তার জোর আছে, কোনোখানে লজ্জা রাখলে চলবে না। অবস্থাটা দেখতে দেখতে দাসীচাকরদের মধ্যেও জানাজানি হল। মধুসূদনের মনে বহুকালের প্রবৃত্তির আগুন যতবড়ো জোরে চাপা ছিল, ততবড়ো জোরেই তা অবারিত হল, কাউকে কেয়ার করলে না, মত্ততা খুব স্থলভাবেই সংসারে প্রকাশ করে দিলে । নবীন মোতির মা দুজনেই বুঝলে এ বান আর ঠেকানো যাবে না। “দিদিকে কি ডেকে আনবে না ? আর কি দেরি করা ভালো ?” “সেই কথাই তো ভাবছি। দাদার হুকুম নইলে তো উপায় নেই। দেখি চেষ্টা করে।” যেদিন সকালে কৌশলে দাদার কাছে কথাটা পাড়বে বলে নবীন এল, দেখে যে দাদা বেরোবার জন্যে প্রস্তুত, দরজার কাছে গাড়ি তৈরি । নবীন জিজ্ঞাসা করলে, “কোথাও বেরোচ্ছ নাকি ?” মধুসূদন একটু সংকোচ কাটিয়ে বললে, “সেই গনংকার বেঙ্কটস্বামীর কাছে।” নবীনের কাছে দুর্বলতা চাপা রাখতেই চেয়েছিল। হঠাৎ মনে হল ওকে সঙ্গে নিয়ে গেলেই সুবিধা হতে পারে। তাই বললে, “চলে আমার সঙ্গে।” নবীন ভাবলে, সর্বনাশ। বললে, “দেখে আসি গে সে বাড়িতে আছে কি না । আমার তো বোধ হচ্ছে সে দেশে চলে গেছে, অন্তত সেইরকম তে কথা।” মধুসুদন বললে, “তা বেশ তো, দেখে আসা যাক না।” নবীন নিরুপায় হয়ে সঙ্গে চলল, কিন্তু মনে মনে প্রমাদ গনলে । গনংকারের বাড়ির সামনে গাড়ি দাড়াতেই নবীন তাড়াতাড়ি নেমে গিয়ে একটু উকি মেরেই বললে, “বোধ হচ্ছে কেউ যেন বাড়িতে নেই।” যেমন বল, সেই মুহূর্তেই স্বয়ং বেঙ্কটস্বামী দাতন চিবোতে চিবোতে দরজার কাছে বেরিয়ে এল। নবীন দ্রুত তার গা ঘেঁষে প্রণাম করে বললে, “সাবধানে কথা কবেন ।”