পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ \LIV সেই এদো ঘরে তক্তপোশে সবাই বসল। নবীন বসল মধুসূদনের পিছনে। মধুসুদন কিছু বলবার আগেই নবীন বলে বসল, “মহারাজের সময় বড়ো খারাপ যাচ্ছে, কবে গ্রহশান্তি হবে বলে দাও শাস্ত্রীজি ।” মধুসূদন নবীনের এই ফাস-করে-দেওয়া প্রশ্নে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বুড়ো আঙল দিয়ে তার উরুতে খুব একটা টিপনি দিলে। বেঙ্কটস্বামী রাশিচক্র কেটে একেবারে স্পষ্টই দেখিয়ে দিলে মধুসূদনের ধনস্থানে শনির দৃষ্টি পড়েছে। গ্রহের নাম জেনে মধুসূদনের কোনো লাভ নেই, তার সঙ্গে বোঝাপড় করা শক্ত। যে যে মানুষ ওর সঙ্গে শত্রুতা করছে স্পষ্ট করে তাদেরই পরিচয় চাই, বর্ণমালার যে বর্গেই পড়ুক নাম বের করতে হবে। নবীনের মুশকিল এই যে, সে মধুসূদনের আপিসের ইতিবৃত্তান্ত কিছুই জানে না। ইশারাতেও সাহায্য খাটবে ন। বেঙ্কটস্বামী মুগ্ধবোধের স্বত্র আওড়ায় আর মধুসূদনের মুখের দিকে আড়ে আড়ে চায়। আজকের দিনের নামের বেলায় ভৃগুমুনি সম্পূর্ণ নীরব । হঠাৎ শাস্ত্রী বলে বসল, শক্রতা করছে একজন স্ত্রীলোক । নবীন হাফ ছেড়ে বঁাচল । সেই স্ত্রীলোকটি যে শু্যামাসুন্দরী এইটে কোনোমতে খাড়া করতে পারলে আর ভাবনা নেই। মধুসুদন নাম চায়। শাস্ত্রী তখন বর্ণমালার বর্গ শুরু করলে। ‘কবর্গ শব্দটা বলে যেন অদৃশু ভৃগুমুনির দিকে কান পেতে রইল – কটাক্ষে দেখতে লাগল মধুসূদনের দিকে। ‘কবর্গ শুনেই মধুসূদনের মুখে ঈষৎ একটু চমক দিলে। ওদিকে পিছন থেকে 'না' সংকেত করে নবীন ডাইনে বঁায়ে লাগাল ঘাড়-নাড়া। নবীনের জানাই নেই যে মাদ্রাজে এ সংকেতের উলটো মানে । বেঙ্কটস্বামীর আর সন্দেহ রইল না— জোরগলায় বললে, “ক’বর্গ। মধুসূদনের মুখ দেখে ঠিক বুঝেছিল ক’বর্গের প্রথম বর্ণটাই। তাই কথাটাকে আরও একটু ব্যাখ্যা করে শাস্ত্রী বললে, এই কয়ের মধ্যেই মধুসূদনের সমস্ত কু। এর পরে পুরে নাম জানবার জন্যে পীড়াপীড়ি না করে ব্যগ্র হয়ে মধুস্থদন জিজ্ঞাসা করলে, “এর প্রতিকার ?” বেঙ্কটস্বামী গম্ভীরভাবে বলে দিলে, “কণ্টকেনৈব কণ্টকং— অর্থাৎ উদ্ধার করবে অন্য একজন স্ত্রীলোক।” মধুসুদন চকিত হয়ে উঠল। বেঙ্কটস্বামী মানবচরিত্রবিদ্যার চর্চা করেছে। নবীন অস্থির হয়ে জিজ্ঞাসা করলে, “স্বামীজি, ঘোড়দৌড়ে মহারাজার ঘোড়াটা কি জিতেছে ?”