পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\O& 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বেঙ্কটস্বামী জানে অধিকাংশ ঘোড়াই জেতে না, একটু হিসাবের ভান করে বলে দিলে, “লোকসান দেখতে পাচ্ছি।” কিছুকাল আগেই মধুসূদনের ঘোড়া মস্ত জিত জিতেছে। মধুসূদনকে কোনো কথা বলবার সময় না দিয়ে মুখ অত্যন্ত বিমৰ্ষ করে নবীন জিজ্ঞাসা করলে, “স্বামীজি, আমার কন্যাটার কী গতি হবে ?” বলা বাহুল্য, নবীনের কন্যা নেই। বেঙ্কটস্বামী নিশ্চয় ঠাওরালে পাত্র খুজছে। নবীনের চেহারা দেখেই বুঝলে, মেয়েটি অপসরা নয়। বলে দিলে, পাত্র শীঘ্ৰ মিলবে না, অনেক টাকা ব্যয় করতে হবে। মধুস্থানকে একটু অবসর না দিয়ে পরে পরে দশ-বারোটা অসংগত প্রশ্নের অদ্ভূত উত্তর বের করে নিয়ে নবীন বললে, “দাদা, আর কেন ? এখন চলো।” গাড়িতে উঠেই নবীন বলে উঠল, “দাদা, ওর সমস্ত চালাকি। ভণ্ড কোথাকার ” 曼 “কিন্তু সেদিন যে—” “সেদিন ও আগে থাকতে খবর নিয়েছিল।” “কেমন করে জানলে যে আমি আসব ?” “আমারই বোকামি। ঘাট হয়েছে ওর কাছে তোমাকে এনেছিলুম।” জ্যোতিষীর প্রতারণার প্রমাণ যতই পাক, ‘ক’বর্গের কু মধুসূদনের মনে বিধে রইল। ভেবে দেখলে যে, নক্ষত্র অনাদর করে খুচরো প্রশ্নের যা তা জবাব দেয়, কিন্তু অাদত প্রশ্নের জবাবে ভুল হয় না। মধুসূদন যার প্রত্যাশাই করে নি সেই দুঃসময় ওর বিবাহের সঙ্গে সঙ্গেই এল। এর চেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ কী হবে ? নবীন আস্তে আস্তে কথা পাড়ল, "দাদা, দুই সপ্তাহ তো কেটে গেল, এইবার বউরানীকে আনিয়ে নিই।” "কেন, তাড়া কিসের? দেখে নবীন, তোমাকে বলে রাখলুম আর কখনোই এ-সব কথা আমার কাছে তুলবে না। যেদিন আমার খুশি আমি আনিয়ে নেব।” নবীন দাদাকে চেনে, বুঝলে এ কথাটা খতম হয়ে গেল। তৰু সাহস করে জিজ্ঞাসা করলে, “মেজেবিউ যদি বউরানীকে দেখতে যায় তা হলে কি দোষ আছে ?” মধুসূদন অবজ্ঞা করে সংক্ষেপে বললে, “যাক-না।” Q