পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ \O& 6. 8& ব্যস্তসমস্ত হয়ে একটা কেদারা দেখিয়ে দিয়ে বিপ্রদাস বললে, “আমুন নবীনবাৰু, এইখানে বসুন।” নবীন বললে, “আমার পরিচয়টা পান নি বোধ হচ্ছে । মনে করেছেন আমি রাজবাড়ির কোন আদুরে ছেলে। যিনি আপনার ছোটাে বোন, আমি তার অধম সেবক, আমাকে সম্মান করে আমায় আশীৰ্বাদটা ফাকি দেবেন না। কিন্তু করেছেন কী ? আপনার অমন শরীরের কেবল ছায়াটি বাকি রেখেছেন ।” “শরীরটা সত্য নয়, ছায়া, মাঝে মাঝে সে খবরটা পাওয়া ভালো। ওতে শেষের পাঠ এগিয়ে থাকে।” কুমু ঘরে ঢুকেই বললে, “ঠাকুরপো, চলো কিছু খাবে।” “খাব, কিন্তু একটা শর্ত আছে। যতক্ষণ পূরণ না হবে, ব্রাহ্মণ অতিথি অভুক্ত তোমার দ্বারে পড়ে থাকবে ।”

  • শর্তটা কী শুনি ।”

“আমাদের বাড়িতে থাকতেই দরবার জানিয়ে রেখেছিলুম কিন্তু সেখানে জোর পাই নি। ভক্তকে একখানি ছবি তোমায় দিতে হবে । সেদিন বলেছিলে নেই, আজ তা বলবার জো নেই, তোমার দাদার ঘরের দেয়ালে ওই তো সামনেই ঝুলছে।” ভালো ছবি দৈবাৎ হয়ে থাকে, কুমুর ওই ছবিটি তেমনি যেন দৈবের রচনা। কপালে যে আলোটি পড়লে কুমুর মনের চেহারাটি মুখে প্রকাশ পায়, সেই আলোটিই পড়েছিল। ললাটে নির্মল বুদ্ধির দীপ্তি, চোখে গভীর সারল্যের সকরুণত । দাড়ানো ছবি। কুমুর স্বন্দর ডান হাতটি একটা শূন্ত চৌকির হাতার উপরে। মনে হয় যেন সামনে ও আপনারই একটা দূরকালের ছায়া দেখতে পেয়ে হঠাৎ থমকে দাড়িয়েছে। নিজের এই ছবিটি কুমুর চোখে পড়ে নি। কলকাতা থেকে ছবিওআল। আনিয়ে বিবাহের কয়দিন আগে ওর দাদা এটি তুলিয়েছিল। তার পরে নিজের ঘরে ছবিটি টাঙিয়েছে, এইটেতে কুমুর হৃদয় আর্দ্র হয়ে গেল। ফোটোগ্রাফের কপি আরও নিশ্চয় আছে, তাই দাদার মুখের দিকে চাইলে। নবীন বললে, “বুঝতে পারছেন বিপ্রদাসবাৰু, বউরানীর দয়া হয়েছে। দেখুন-না ওঁর চোখের দিকে চেয়ে। অযোগ্য বলেই আমার প্রতি ওঁর একটু বিশেষ করুণা।”