পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9\ყ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী মোতির মা বললে, “বাড়িকে ভূতে পেয়েছে বউরানী, ওখানে টিকে থাকা দায়। তুমি কি যাবে না ?” “আমার কি ডাক পড়েছে ?” “ন, ডাকবার কথা বোধ হয় মনেও নেই। কিন্তু তুমি না গেলে তে৷ চলবেই না।” “আমার কী করবার অাছে ? আমি তো তাকে তৃপ্ত করতে পারব না। ভেবে দেখতে গেলে আমার জন্যেই সমস্ত কিছু হয়েছে, অথচ কোনো উপায় ছিল না। আমি যা দিতে পারতুম সে তিনি নিতে পারলেন না। আজ আমি শূন্য হাতে গিয়ে কী করব ?” “বল কী বউরানী, সংসার যে তোমারই, সে তো তোমার হাতছাড়া হলে চলবে না।” “সংসার বলতে কী বোঝ ভাই ? ঘরকুয়োর, জিনিসপত্র, লোকজন ? লজ্জা করে এ কথা বলতে যে, তাতে আমার অধিকার আছে। মহলে অধিকার খুইয়েছি, এখন কি ওই-সব বাইরের জিনিস নিয়ে লোভ করা চলে ?” “কী বলছ ভাই বউরানী ? ঘরে কি তুমি একেবারেই ফিরবে না ?” “সব কথা ভালো করে বুঝতে পারছি নে। আর কিছুদিন আগে হলে ঠাকুরের কাছে সংকেত চাইতুম, দৈবজ্ঞের কাছে শুধোতে যে তুম। কিন্তু আমার সে-সব ভরসা ধুয়েমুছে গেছে। আরম্ভে সব লক্ষণই তো ভালো ছিল। শেষে কোনোটাই তো একটুও খাটল না। আজ কতবার বসে বসে ভেবেছি দেবতার চেয়ে দাদার বিচারের উপর ভর করলে এত বিপদ ঘটত না। তবুও মনের মধ্যে যে দেবতাকে নিয়ে দ্বিধা উঠেছে, হৃদয়ের মধ্যে র্তাকে এড়াতে পারি নে। ফিরে ফিরে সেইখানে এসে লুটিয়ে পড়ি ।” “তোমার কথা শুনে যে ভয় লাগে। ঘরে কি যাবেই না ?” “কোনো কালেই যাব না সে কথা ভাবা শক্ত, যাবই সে কথাও সহজ নয়।” “আচ্ছ, তোমার দাদার কাছে একবার কথা বলে দেখব। দেখি তিনি কী বলেন । র্তার দর্শন পাওয়া যাবে তো ?” "চলো না, এখনই নিয়ে যাচ্ছি।” বিপ্রদাসের ঘরে ঢুকেই তার চেহার দেখে মোতির মা থমকে দাড়াল, মনে হল যেন ভূমিকম্পের পরেকার আলো-নেব চুড়ো-ভাঙা মন্দির। ভিতরে একটা অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা। প্রণাম করে পায়ের ধুলো নিয়ে মেজের উপর বসল। বিপ্রদাস ব্যস্ত হয়ে বললে, “এই যে চৌকি আছে।” মোতির মা মাথা নেড়ে বললে, “না, এখানে বেশ আছি।”