পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী سbواليا ভাবি দুঃখ যদি পেতেই হয়, তাকে মেনে নিয়েও তাকে ছাড়িয়ে ওঠবার উপায় করতে হবে। তাই তো মেয়ের এত করে ধর্মকে আশ্রয় করে থাকে।” বিপ্রদাস কিছুই বললে না, চুপ করে বসে রইল। সেই ওর চুপ করে বসে থাকাটাও কুমুকে কষ্ট দিলে। কুমু জানে কথা বলার চেয়েও এর ভার অনেক বেশি। 嘎 ঘর থেকে বেরিয়ে এসে মোতির মা কুমুকে জিজ্ঞাসা করলে, “কী ঠিক করলে বউরানী ?” কুমু বললে, “যেতে পারব না। তা ছাড়া, আমাকে তো ফিরে যাবার অনুমতি দেন নি ।” মোতির মা মনে মনে কিছু বিরক্তই হল। শ্বশুরবাড়ির প্রতি ওর শ্রদ্ধা যে বেশি তা নয়, তবু শ্বশুরবাড়ি সম্বন্ধে দীর্ঘকালের মমত্ববোধ ওর হৃদয়কে অধিকার করে আছে । সেখানকার কোনো বউ যে তাকে লঙ্ঘন করবে এটা তার কিছুতেই ভালে৷ লাগল না। কুমুকে যা বললে তার ভাবটা এই পুরুষমানুষের প্রকৃতিতে দরদ কম আর তার অসংযম বেশি, গোড় থেকেই এটা তো ধরা কথা । স্বষ্টি তো আমাদের হাতে নেই, যা পেয়েছি তাকে নিয়েই ব্যবহার করতে হবে। ‘ওরা ওই রকমই বলে মনটাকে তৈরি করে নিয়ে যেমন করে হোক সংসারটাকে চালানোই চাই । কেননা সংসারটাই মেয়েদের। স্বামী ভালোই হোক মন্দই হোক, সংসারটাকে স্বীকার করে নিতেই হবে। তা যদি একেবারে অসম্ভব হয় তা হলে মরণ ছাড়। আর গতিই নেই। কুমু হেসে বললে, “না হয় তাই হল। মরণের অপরাধ কী ?” মোতির মা উদ্বিগ্ন হয়ে বলে উঠল, “আমন কথা বোলো না।” কুমু জানে না, অল্পদিন হল ওদেরই পাড়াতে একটি সতেরে বছরের বউ কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। তার এম. এ. পাস-করা স্বামী— গবর্মেন্ট আপিসে বড়ে চাকরি করে। স্ত্রী খোপায় গোজবার একটা রুপোর চিরুনি হারিয়ে ফেলেছে, মার কাছ থেকে এই নালিশ শুনে লোকটা তাকে লাথি মেরেছিল । মোতির মার সেই কথা মনে পড়ে গায়ে কাটা দিলে । এমন সময় নবীনের প্রবেশ। কুমু খুশি হয়ে উঠল। বললে, “জানতুম ঠাকুরপোর আসতে বেশি দেরি হবে না।” নবীন হেসে বললে, “ন্যায়শাস্ত্রে বউরানীর দখল আছে, আগে দেখেছেন শ্ৰীমতী ধোয়াকে, তার থেকে শ্ৰীমান আগুনের আবির্ভাব হিসেব করতে শক্ত ঠেকে নি।”