পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৭২ রবীন্দ্র-রচনাবলী মোতির মা বললে, “তোমার ঠাকুরপে পথ চেয়ে আছেন।” “জন্ম জন্ম পথ চেয়ে ছিলুম, এইবার দর্শন পেলুম।” “আঃ ঠাকুরপে ! এত কথা তুমি বানিয়ে বলতে পার কী করে ?” “নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাই, বুঝতে পারি নে।” “আচ্ছ, চলো এখন খেতে যাবে।” “খাবার আগে একবার তোমার দাদার সঙ্গে কিছু কথাবার্তা কয়ে আসি গে।” “না, সে হবে না।” “কেন ?” “আজ দাদা অনেক কথা বলেছেন, আজ আর নয়।” “ভালো খবর অাছে।” “তা হোক, কাল এসো বরঞ্চ । আজ কোনো কথা নয়।” “কাল হয়তে ছুটি পাব না, হয়তে বাধা ঘটবে। দোহাই তোমার, আজ একবার কেবল পাচ মিনিটের জন্যে। তোমার দাদা খুশি হবেন, কোনো ক্ষতি হবে না তার ” “আচ্ছ, আগে তুমি খেয়ে নাও, তার পরে হবে।” খাওয়া হয়ে গেলে পর কুমু নবীনকে বিপ্রদাসের ঘরে নিয়ে এল। দেখলে দাদা তখনও ঘুমোয় নি। ঘর প্রায় অন্ধকার, আলোর শিখা স্নান । খোলা জানলা দিয়ে তারা দেখা যায় ; থেকে থেকে হু হু করে বইছে দক্ষিণের হাওয়া ; ঘরের পর্দা, বিছানার ঝালর, অালনায় ঝোলানো বিপ্রদাসের কাপড় নানারকম ছায় বিস্তার করে কেঁপে কেঁপে উঠছে ; মেজের উপর খবরের কাগজের একটা পাতা যখন-তখন এলোমেলে৷ উড়ে বেড়াচ্ছে। আধ-শোওয়া অবস্থায় বিপ্রদাস স্থির হয়ে বসে। এগোতে নবীনের পা সরে না। প্রদোষের ছায়া আর রোগের শীর্ণতা বিপ্রদাসকে একটা আবরণ দিয়েছে, মনে হচ্ছে ও যেন সংসার থেকে অনেক দূর, যেন অন্য লোকে । মনে হল ওর মতো এমনতরো একলা মাহুষ আর জগতে নেই। নবীন এসে বিপ্রদাসের পায়ের ধুলো নিয়ে বললে, “বিশ্রামে ব্যাঘাত করতে চাই নে। একটি কথা বলে যাব । সময় হয়েছে, এইবার বউরানী ঘরে ফিরে আসবেন বলে আমরা চেয়ে অাছি।” বিপ্রদাস কোনো উত্তর করলে না, স্থির হয়ে বসে রইল। খানিক পরে নবীন বললে, “আপনার অনুমতি পেলেই ওঁকে নিয়ে যাবার বন্দোবস্ত করি।”