পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ \©ግ© ইতিমধ্যে কুমু ধীরে ধীরে দাদার পায়ের কাছে এসে বসেছে। বিপ্রদাস তার মুখের উপর দৃষ্টি রেখে বললে, “মনে যদি করিস তোর যাবার সময় হয়েছে তা হলে যা কুমু।” কুমু বললে, “না দাদা, যাব না।” বলে বিপ্রদাসের হাটুর উপর উপুড় হয়ে পড়ল। ঘর স্তব্ধ, কেবল থেকে থেকে দমকা বাতাসে একটা শিথিল জানলা খড়, খড়, করছে, আর বাইরে বাগানে গাছের পাতাগুলো মর্মরিয়ে উঠছে। কুমু একটু পরে বিছানা থেকে উঠেই নবীনকে বললে, “চলে আর দেরি নয়। দাদা, তুমি ঘুমোও।” মোতির মা বাড়িতে ফিরে এসে বললে, “এতটা কিন্তু ভালো না।” “অর্থাং চোখে খোচা দেওয়াটা যেমনি হোক-না, চোখট রাঙা হয়ে ওঠা একেবারেই ভালো নয়।” “ন গো না, ওটা ওঁদের দেমাক। সংসারে ওঁদের যোগ্য কিছুই মেলে না, ওঁরা সবার উপরে।” “মেজোবউ, এতবড়ো দেমাক সবাইকে সাজে না, কিন্তু ওঁদের কথা আলাদা।” “তাই বলে কি আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি করতে হবে ।” “আত্মীয়স্বজন বললেই আত্মীয়স্বজন হয় না। ওঁরা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ আর-এক শ্রেণীর মানুষ । সম্পর্ক ধরে ওঁদের সঙ্গে ব্যবহার করতে আমার সংকোচ হয় ।” “যিনি যতবড়ো লোকই হোন-না কেন, তৰু সম্পর্কের জোর আছে এটা মনে রেখে৷ ” নবীন বুঝতে পারলে এই আলোচনার মধ্যে কুমুর পরে মোতির মীর একটুখানি ঈর্ষার বীজও আছে। তা ছাড়া এটাও সত্যি, পারিবারিক বাধনটার দাম মেয়েদের কাছে খুবই বেশি। তাই নবীন এ নিয়ে বৃথা তর্ক না করে বললে, “আর কিছুদিন দেখাই যাক-না। দাদার আগ্রহটাও একটু বেড়ে উঠুক, তাতে ক্ষতি হবে না।” ○ ○ মধুসূদনের সংসারে তার স্থানটা পাকা হয়েছে বলেই শু্যামান্বন্দরী প্রত্যাশা করতে পারত, কিন্তু সে কথা অনুভব করতে পারছে না। বাড়ির চাকরবাকরদের পরে ওর কতৃত্বের দাবি জন্মেছে বলে প্রথমটা ও মনে করেছিল, কিন্তু পদে পদে বুঝতে পারছে যে তারা ওকে মনে মনে প্রভুপদে বসাতে রাজি নয়। ওকে সাহস করে