পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ වbroS বিপ্রদাস দ্বিতীয়বার অনুরোধ করলে না। চাকরকে বললে, “পিসিমাকে বলে। গে, ওঁর শরীর ভালো নেই, খেতে পারবেন না।” বিপ্রদাস চুপ করে রইল। মধুসূদন আশা করেছিল, কুমুর কথা আপনিই উঠবে। এতদিন হয়ে গেল, এখন কুমুকে শ্বশুরবাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার প্রস্তাব বিপ্রদাস আপনিই উদ্বিগ্ন হয়ে করবে— কিন্তু কুমুর নামও করে না যে! ভিতরে ভিতরে একটু একটু করে রাগ জন্মাতে লাগল। ভাবলে এসে ভুল করেছি। সমস্ত নবীনের কাও । এখনই গিয়ে তাকে খুব একটা কড়া শাস্তি দেবার জন্যে মনটা ছট্‌ফট্‌ করতে লাগল । এমন সময় সাদাসিধে সরু কালাপেড়ে একখানি শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা টেনে কুমু ঘরে প্রবেশ করলে। বিপ্রদাস এটা আশা করে নি। সে আশ্চর্য হয়ে গেল। প্রথমে স্বামীর, পরে দাদার পায়ের ধুলো নিয়ে কুমু মধুসূদনকে বললে, "দাদার শরীর ক্লান্ত, ওঁকে বেশি কথা কওয়াতে ডাক্তারের মান। তুমি এই পাশের ঘরে এসে * মধুস্থদনের মুখ লাল হয়ে উঠল। দ্রুত চৌকি থেকে উঠে পড়ল। কোল থেকে গুড়গুড়ির নলটা মাটিতে পড়ে গেল। বিপ্রদাসের মুখের দিকে না চেয়েই বললে, “আচ্ছ, তবে আসি।” প্রথম ঝোকটা হল হন হন করে গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু মন পড়েছে বাধা। অনেক দিন পরে আজ কুমুকে দেখেছে। ওকে অত্যন্ত সাদাসিধে আটপৌরে কাপড়ে এই প্রথম দেখলে। ওকে এত সুন্দর আর কখনও দেখে নি। এমন সংযত এত সহজ। মধুসূদনের বাড়িতে ও ছিল পোশাকি মেয়ে, যেন বাইরের মেয়ে এখানে সে একেবারের ঘরের মেয়ে। আজ যেন ওকে অত্যন্ত কাছের থেকে দেখা গেল। কী স্নিগ্ধ মূর্তি | মধুসূদনের ইচ্ছে করতে লাগল, একটু দেরি না করে এখনই ওকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। ও আমার, ও আমারই, ও আমার ঘরের, আমার ঐশ্বর্ষের, আমার সমস্ত দেহমনের, এই কথাটা উলটেপালটে বলতে ইচ্ছে করে। পাশের ঘরে একটা সোফা দেখিয়ে কুমু যখন বসতে বললে, তখন ওকে বসতেই হল। নিতান্ত যদি বাইরের ঘর না হত তা হলে কুমুকে ধরে সোফায় আপনার পাশে বসতি। কুমু না বসে একটা চৌকির পিছনে তার পিঠের উপর হাত রেখে দাড়াল। বললে, “আমাকে কিছু বলতে চাও ?” - ঠিক এমন স্বরে প্রশ্নটা মধুসূদনের ভালে লাগল না, বললে, “যাবে না বাড়িতে ?” “ন। "