পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯২ রবীন্দ্র-রচনাবলী আছে বৈকুণ্ঠ, সেইখানে আছেন আমার ঠাকুর । তোমার কাছে এসব কথা বলতে লজ্জা করে – কিন্তু আর তো কখনও বলা হবে না, আজ বলে যাই । নইলে আমার জন্যে মিছিমিছি ভাববে। সমস্ত গিয়েও তৰু বাকি থাকে এই কথাটা বুঝতে পেরেছি। সেই আমার অফুরান, সেই আমার ঠাকুর। এ যদি না বুঝতুমতী হলে এইখানে তোমার পায়ে মাথা ঠুকে মরতুম, সে গারদে চুকতুম না। দাদা, এ সংসারে তুমি আমার আছ বলেই তবে এ কথা বুঝতে পেরেছি।” এই বলেই কুমু চৌকি থেকে নেবে দাদার পায়ের উপর মাথা রেখে পড়ে রইল। রাত বেড়ে চলল, বিপ্রদাস জানালার বাইরে অনিমেষ দৃষ্টি মেলে ভাবতে লাগল। Qbr পরদিন ভোরে বিপ্রদাস কুমুকে ডেকে পাঠালে। কুমু এসে দেখে বিপ্রদাস বিছানায় বসে, একটি এসরাজ আছে কোলের উপর, আর একটি পাশে শোওয়ানো। কুমুকে বললে, “নে যন্ত্রটা, আমরা দুজনে মিলে বাজাই ।” তখনও অল্প অল্প অন্ধকার, সমস্ত রাত্রির পরে বাতাস একটু ঠাণ্ড হয়ে অশথপাতার মধ্যে ঝির ঝির করছে, কাকগুলো ডাকতে শুরু করেছে। দুজনে ভৈরে রাগিণীতে আলাপ শুরু করলে, গম্ভীর শান্ত সকরুণ ; সতীবিরহ যখন অচঞ্চল হয়ে এসেছে, মহাদেবের সেইদিনকার প্রভাতের ধ্যানের মতো। বাজাতে বাজাতে পুষ্পিত কৃষ্ণচূড়ার ডালের ভিতর দিয়ে অরুণ-আভা উজ্জ্বলতর হয়ে উঠল, সুর্য দেখা দিল বাগানের পাচিলের উপরে। চাকররা দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে থেকে ফিরে গেল। ঘর সাফ করা হল না। রোদ ত্র ঘরের মধ্যে এল, দরোয়ান আস্তে আস্তে এসে খবরের কাগজ টিপাইয়ের উপর রেখে দিয়ে নিঃশবপদে চলে গেল। অবশেষে বাজনা বন্ধ করে বিপ্রদাস বললে, “কুমু, তুই মনে করিস আমার কোনো ধর্ম নেই। আমার ধর্মকে কথায় বলতে গেলে ফুরিয়ে যায় তাই বলি নে। গানের স্বরে তার রূপ দেখি, তার মধ্যে গভীর দুঃখ গভীর আনন্দ এক হয়ে মিলে গেছে ; তাকে নাম দিতে পারি নে। তুই আজ চলে যাচ্ছিস কুমু, আর হয়তো দেখা হবে না, আজ সকালে তোকে সেই-সকল বেস্বরের সকল অমিলের পরপারে এগিয়ে দিতে এলুম। শকুন্তলা পড়েছিল— দুষ্যস্তের ঘরে যখন শকুন্তলা যাত্রা করে বেরিয়েছিল, কথ কিছুদূর পর্যন্ত তাকে পৌছিয়ে দিলেন। ষে লোকে তাকে উত্তীর্ণ করতে তিনি বেরিয়েছিলেন, তার মাঝখানে ছিল দুঃখ-অপমান। কিন্তু সেইখানেই থামল না তাও