পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ob- ররীন্দ্র-রচনাবলী জনতার অংশ, কেবল তিনি যেন একাকী একজন। সেদিন আর-কাহারও পরিচয় জানিবার জন্য আমার কোনোরূপ প্রয়াস জন্মে নাই, কিন্তু তাহাকে দেখিয়৷ তৎক্ষণাৎ আমি এবং আমার একটি আত্মীয় সঙ্গী একসঙ্গেই কৌতুহলী হইয়া উঠিলাম। সন্ধান লইয়া জানিলাম তিনিই আমাদের বহুদিনের অভিলষিতদর্শন লোকবিশ্রত বঙ্কিমবাবু। মনে আছে, প্রথম দর্শনেই তাহার মুখশ্ৰীতে প্রতিভার প্রখরতা এবং বলিষ্ঠত এবং সর্বলোক হইতে র্তাহার একটি স্থদুর স্বাতন্ত্র্যভাব আমার মনে অঙ্কিত হইয়৷ গিয়াছিল। তাহার পর অনেক বার তাহার সাক্ষাৎলাভ করিয়াছি, তাহার নিকট অনেক উৎসাহ এবং উপদেশ প্রাপ্ত হইয়াছি, এবং তাহার মুখশ্ৰী স্নেহের কোমলহাস্তে অত্যন্ত কমনীয় হইতে দেখিয়াছি, কিন্তু প্রথম দর্শনে সেই-যে র্তাহার মুখে উদ্যত খড়গের ন্যায় একটি উজ্জল সুতীক্ষ প্রবলতা দেখিতে পাইয়াছিলাম, তাহ আজ পর্যন্ত বিস্তৃত হই নাই। সেই উৎসব উপলক্ষে একটি ঘরে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত দেশানুরাগমূলক স্বরচিত সংস্কৃত শ্লোক পাঠ এবং তাহার ব্যাখ্যা করিতেছিলেন। বঙ্কিম এক প্রান্তে দাড়াইয়। শুনিতেছিলেন । পণ্ডিতমহাশয় সহসা একটি শ্লোকে পতিত ভারতসন্তানকে লক্ষ্য করিয়া একটা অত্যস্ত সেকেলে পণ্ডিতি রসিকতা প্রয়োগ করিলেন, সে রস কিঞ্চিৎ বীভৎস হইয়া উঠিল। বঙ্কিম তৎক্ষণাৎ একান্ত সংকুচিত হইয়া দক্ষিণকরতলে মুখের নিম্নার্ধ ঢাকিয়া পাশ্ববতী দ্বার দিয়া দ্রুতবেগে অন্য ঘরে পলায়ন করিলেন । _ বঙ্কিমের সেই সসংকোচ পলায়নদৃশুটি অদ্যাবধি আমার মনে মুদ্রাঙ্কিত হইয়৷ আছে । বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে, ঈশ্বর গুপ্ত যখন সাহিত্যগুরু ছিলেন বঙ্কিম তখন তাহার শিষ্যশ্রেণীর মধ্যে গণ্য ছিলেন । সে সময়কার সাহিত্য অন্য যে-কোনো প্রকার শিক্ষা দিতে সমর্থ হউক ঠিক স্বরুচি শিক্ষার উপযোগী ছিল না। সে সময়কার অসংযত বাকযুদ্ধ এবং আন্দোলনের মধ্যে দীক্ষিত ও বর্ধিত হইয়া ইতরতার প্রতি বিদ্বেষ, সুরুচির প্রতি শ্রদ্ধা এবং শ্লীলতা সম্বন্ধে অক্ষুন্ন বেদনাবোধ রক্ষা করা কী যে আশ্চর্য ব্যাপার তাহ৷ সকলেই বুঝিতে পরিবেন। দীনবন্ধুও বঙ্কিমের সমসাময়িক এবং র্তাহার বান্ধব ছিলেন, কিন্তু তাহার লেখায় অন্য ক্ষমতা প্রকাশ হইলেও তাহতে বঙ্কিমের প্রতিভার এই ব্রাহ্মণোচিত শুচিত। দেখা যায় না। র্তাহার রচনা হইতে ঈশ্বর গুপ্তের সময়ের ছাপ কালক্রমে ধৌত হইতে পারে নাই। 鸞 আমাদের মধ্যে যাহারা সাহিত্যব্যবসায়ী তাহারা বঙ্কিমের কাছে যে কী চিরঋণে