পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8X > বিহারীলাল বর্তমান নববর্ষের প্রারম্ভেই কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর পরলোকপ্রাপ্তি হইয়াছে । বঙ্গের সারস্বতকুঞ্জে মৃত্যু ব্যাধের ন্যায়ঞ্জবেশ করিয়াছে। তাহার নিষ্ঠুর শরসন্ধানে অল্পকালের মধ্যে অনেকগুলি কণ্ঠ নীরব হইয়া গেল । তন্মধ্যে বিহারীলালের কণ্ঠ সাধারণের নিকট তেমন সুপরিচিত ছিল না। র্তাহার শ্রোতৃমণ্ডলীর সংখ্যা অল্প ছিল এবং তাহার স্বমধুর সংগীত নির্জনে নিভৃতে ধ্বনিত হইতে থাকিত, খ্যাতির প্রার্থনায় পাঠক এবং সমালোচক -সমাজের দ্বারবর্তী হইত না । কিন্তু যাহারা দৈবক্রমে এই বিজনবাসী ভাবনিমগ্ন কবির সংগীতকাকলিতে আকৃষ্ট হইয় তাহার কাছে আসিয়াছিল তাহদের নিকটে তাহার অাদরের অভাব ছিল না। তাহার। তাহাকে বঙ্গের শ্রেষ্ঠ কবি বলিয়া জানিত । বঙ্গদর্শন প্রকাশ হইবার বহুপূর্বে কিছুকাল ধরিয়া অবোধবন্ধু-নামক একটি মাসিক পত্র বাহির হইত। তখন বর্তমান লেখক বালকবয়সপ্রযুক্ত নিতাস্ত অবোধ ছিল। কিঞ্চিৎ বয়ঃপ্রাপ্তিসহকারে যখন বোধোদয় হইল তখন উক্ত কাগজ বন্ধ হইয়া গেল । সৌভাগ্যক্রমে পত্রগুলি কতক বাধানে কতক-বা খণ্ড আকারে আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার আলমারির মধ্যে রক্ষিত ছিল। অনেক মূল্যবান গ্রন্থাদি থাকাতে সে আলমারিতে চপলপ্রকৃতি বালকদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ ছিল। এক্ষণে নিৰ্ভয়ে স্বীকার করিতে পারি, অবোধবন্ধুর বন্ধুত্ব-প্রলোভনে মুগ্ধ হইয়া সে নিষেধ লঙ্ঘন করিয়াছিলাম। এই গোপন দুষ্কর্মের জন্য কোনোরূপ শাস্তি পাওয়া দূরে থাক, বহুকাল ধরিয়া যে আনন্দলাভ করিয়াছিলাম তাহ এখনও বিস্মৃত হই নাই । এখনও মনে আছে ইস্কুল ফাকি দিয়া একটি দক্ষিণদ্বার ঘরে সুদীর্ঘ নির্জন মধ্যাহ্নে অবোধবন্ধু হইতে পৌল-বর্জিনীর বাংলা অনুবাদ পাঠ করিতে করিতে প্রবল বেদনায় হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যাইত। তখন কলিকাতার বহির্বতী প্রকৃতি আমার নিকট অপরিচিত ছিল— এবং পৌল-বর্জিনীতে সমুদ্রতটের অরণ্যদৃশ্ববর্ণনা অামার নিকট অনির্বচনীয় মুখস্বপ্নের ন্যায় প্রতিভাত হইত, এবং সেই তরঙ্গঘণতধ্বনিত বনচ্ছায়াস্নিগ্ধ সমুদ্রবেলায় পৌল-বর্জিনীর মিলন এবং বিচ্ছেদবেদন৷ হৃদয়ের মধ্যে যেন মুছনাসহকারে অপূর্ব সংগীতের মতো বাজিয়া উঠিত। এই ক্ষুদ্র পত্রে যে-সকল গদ্যপ্রবন্ধ বাহির হইত, তাহার মধ্যে কিছু বিশেষত্ব ፳፬: ግ