পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8లి: রবীন্দ্র-রচনাবলী পুন কেন অশ্রজল, বহ তুমি অবিরল, চরণকমল আহা ধুয়াও দেবীর । মানসসরসী-কোলে সোনার নলিনী দোলে, অনিয়ে পরাও গলে সমীর সুধীর । বিহঙ্গম, খুলে প্রাণ ধরে রে পঞ্চম তান, সারদামঙ্গলগান গাও কুতুহলে। কবি যে সুত্রে ‘সারদামঙ্গলে’র এই কবিতাগুলি গণথিয়াছেন তাহ ঠিক ধরিতে পারিয়াছি কি না জানি না— মধ্যে মধ্যে স্বত্র হারাইয়া যায়, মধ্যে মধ্যে উচ্ছাসু উন্মত্ততায় পরিণত হয়— কিন্তু এ কথা বলিতে পারি আধুনিক বঙ্গসাহিত্যে প্রেমের সংগীত এরূপ সহস্রধার উৎসের মতো কোথাও উৎসারিত হয় নাই। এমন নির্মল সুন্দর ভাষা, এমন ভাবের আবেগ, কথার সহিত এমন সুরের মিশ্রণ আর কোথাও পাওয়৷ যায় না ; বর্তমান সমালোচক এককালে ‘বঙ্গমুন্দরী’ ও ‘সারদামঙ্গলের কবির নিকট হইতে কাব্যশিক্ষার চেষ্টা করিয়াছিল, কতদূর কৃতকার্য হইয়াছে বলা যায় না, কিন্তু এই শিক্ষাটি স্থায়ীভাবে হৃদয়ে মুদ্রিত হইয়াছে যে, সুন্দর ভাষা কাব্যসৌন্দর্যের একটি প্রধান অঙ্গ ; ছন্দে এবং ভাষায় সর্বপ্রকার শৈথিল্য কবিতার পক্ষে সাংঘাতিক। এই প্রসঙ্গে আমার সেই কাব্যগুরুর নিকট আর-একটি ঋণ স্বীকার করিয়া লই । বাল্যকালে ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’ নামক একটি গীতিনাট্য রচনা করিয়া “বিদ্বজ্জনসমাগম’-নামক সম্মিলন উপলক্ষে অভিনয় করিয়াছিলাম। বঙ্কিমচন্দ্র এবং অন্যান্য অনেক রসজ্ঞ লোকের নিকট সেই ক্ষুদ্র নাটকটি প্রতিপ্রদ হইয়াছিল। সেই নাটকের মূল ভাবটি, এমন-কি, স্থানে স্থানে তাহার ভাষা পর্যন্ত বিহারীলালের সারদামঙ্গলের আরম্ভভাগ হইতে গৃহীত। আজ কুড়ি বৎসর হইল সারদামঙ্গল’ আর্যদর্শন পত্রে এবং ষোলো বৎসর হইল পুস্তকাকারে প্রকাশিত হইয়াছে ; ভারতী পত্রিকায় কেবল একটিমাত্র সমালোচক ইহাকে সাদরসম্ভাষণ করেন। তাহার পর হইতে ‘সারদামঙ্গল’ এই ষোড়শ বৎসর অনাদৃতভাবে প্রথম সংস্করণের মধ্যেই অজ্ঞাতবাস যাপন করিতেছে। কবিও সেই অবধি আর বাহিরে দর্শন দেন নাই। যিনি জীবনরঙ্গভূমির নেপথ্যে প্রচ্ছন্ন থাকিয়৷ দর্শকমণ্ডলীর স্থতিধ্বনির অতীত ছিলেন তিনি আজ মৃত্যুর যবনিকান্তরালে অপস্থত