পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8 ՖԳ সহিত সাক্ষাৎ হইবে না, কোনো গল্প হইবে না, তথাপি কেন আমায় সেখানে যাইতে হইত জানি না। এখন দেখি এ বেগ আমার একণর নহে। যে সময় উঠানে ছায়৷ পড়ে, নিত্য সে সময় কুলবধূর মন মাতিয়া উঠে জল আনিতে যাইবে । জল আছে বলিলেও তাহারা জল ফেলিয়া জল আনিতে যাইবে । জলে যে যাইতে পাইল না সে অভাগিনী, সে গৃহে বসিয়া দেখে উঠানে ছায়া পড়িতেছে, আকাশে ছায় পড়িতেছে, পৃথিবীর রঙ ফিরিতেছে, বাহির হইয়া সে তাহ দেখিতে পাইল না, তাহার কত দুঃখ । বোধ হয় আমিও পৃথিবীর রঙ-ফেরা দেখিতে যাইতাম।” চন্দ্রনাথবাবু বলেন— ‘জল আছে বলিলেও তাহারা জল ফেলিয়া জল অগনিতে যায়, আমাদের মেয়েদের জল আনা এমন করিয়া কয় জন লক্ষ্য করে ? আমাদের বিবেচনায় সমালোচকের এ প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক। হয়তো, অনেকেই লক্ষ্য করিয়া দেখিয়া থাকিবে, হয়তো নাও দেখিতে পারে। কুলবধুরা জল ফেলিয়াও জল আনিতে যায়, সাধারণের স্থলদৃষ্টির অগোচর এই নবাবিষ্কৃত তথ্যটির জন্য আমরা উপরি-উদ্ধৃত বর্ণনাটির প্রশংসা করি না। বাংলাদেশে অপরাহ্লে মেয়েদের জল আনিতে যাওয়া -নামক সর্বসাধারণের সুগোচর একটি অত্যন্ত পুরাতন ব্যাপারকে সঞ্জীব নিজের কল্পনার সৌন্দর্যকিরণ দ্বারা মণ্ডিত করিয়া তুলিয়াছেন বলিয়। উক্ত বর্ণনা আমাদের নিকট আদরের সামগ্রী । যাহা সুগোচর তাহ সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে ইহা আমাদের পরম লাভ । সম্ভবত, সত্যের হিসাব হইতে দেখিতে গেলে অনেক মেয়ে ঘাটে সর্থীমণ্ডলীর নিকট গল্প শুনিতে বা কুৎসা রটনা করিতে যায়, হয়তে সমস্ত দিন গৃহকার্যের পর ঘরের বাহিরে জল আনিতে যাওয়াতে তাহার একটা পরিবর্তন অনুভব করিয়া সুখ পায়, অনেকেই হয়তো নিতান্তই কেবল একটা অভ্যাসপালন করিবার জন্য ব্যগ্র হয় মাত্র, কিন্তু সেই-সকল মনস্তত্বের মীমাংসাকে আমরা এ স্থলে অকিঞ্চিৎকর জ্ঞান করি। অপরাহ্লে জল আনিতে যাইবার যতগুলি কারণ সম্ভব হইতে পারে তন্মধ্যে সব-চেয়ে যেটি সুন্দর সঞ্জীব সেইটি আরোপ করিবামাত্র অপরাহ্লের ছায়ালোকের সহিত মিশ্রিত হইয়া কুলবধুর জল আনার দৃশ্যটি বড়োই মনোহর হইয়া উঠে ; এবং যে মেয়েটি জল আনিতে যাইতে পারিল না বলিয়া এক বসিয়া শূন্তমনে দেখিতে থাকে উঠানের ছায়। দীর্ঘতর এবং আকাশের ছায়। নিবিড়তর হইয়া আসিতেছে, তাহার বিষন্ন মুখের উপর সায়াহ্নের মান স্বর্ণচ্ছায়া পতিত হইয় গৃহপ্রাঙ্গণতলে একটি অপরূপ সুন্দর মূর্তির সৃষ্টি করিয়৷ তোলে। এই মেয়েটিকে যে সঞ্জীব লক্ষ্য করিয়াছেন এবং আমরা লক্ষ্য করি নাই তাহা নহে, তিনি ইহাকে স্বষ্টি করিয়াছেন, তিনি ইহাকে সম্ভবপররূপে