আধুনিক সাহিত্য 88○ অঞ্চলটির অন্তরালে আপনার নিভৃত কোমল কুলায়ের মধ্যে ফিরিয়া আশ্রয় গ্রহণ করে । এখন প্রেমে বেদনা অপেক্ষ বিলাস বেশি। ইহাতে গভীরতার অটল স্থৈর্য নাই কেবল নবানুরাগের উদভ্ৰান্ত লীলাচাঞ্চল্য। বিদ্যাপতির এই পদগুলি পড়িতে পড়িতে একটি সমীরচঞ্চল সমুদ্রের উপরিভাগ চক্ষে পড়ে। ঢেউ খেলিতেছে ; ফেন উচ্ছসিত হইয়া উঠিতেছে, মেঘের ছায় পড়িতেছে ; স্বর্যের আলোক শত শত অংশে প্রতিস্ফুরিত হইয়। চতুর্দিকে বিক্ষিপ্ত হইতেছে ; তরঙ্গে তরঙ্গে স্পর্শ এবং পলায়ন, কলরব, কলহস্ত, করতালি ; কেবল নৃত্য এবং গীত, আভাস এবং আন্দোলন, আলোক এবং বর্ণ বৈচিত্র্য। এই নবীন চঞ্চল প্রেমহিল্লোলের উপর সৌন্দর্য যে কত ছন্দে কত ভঙ্গীতে বিচ্ছুরিত হইয়া উঠে, বিদ্যাপতির গানে তাহাই প্রকাশ পাইয়াছে। কিন্তু সমুদ্রের অন্তর্দেশে যে গভীরতা, নিস্তব্ধতা, যে বিশ্ববিশ্বত ধ্যানলীনতা আছে তাহ বিদ্যাপতির গীতি-তরঙ্গের মধ্যে পাওয়া যায় না । 壘 事 কদাচ কখনও দেখা হয়, যমুনার জলে অথবা স্নান করিয়া ফিরিবার সময়। কিন্তু ভালো করিয়া দেখা হয় না। একে অল্পক্ষণের দেখা, তাহাতে অধৈর্যচঞ্চল দোদুল্যমান হৃদয়ে সৌন্দর্যের যে প্রতিবিম্ব পড়ে তাহা ভাঙিয়া ভাঙিয়া যায়— মনকে শাস্ত করিয়া ধৈর্য ধরিয়া দেখিবার অবসর পাওয়া যায় না— যেটুকু দেখা গেল সে কেবল— ‘অণধ অঁাচর খসি অধিবদনে হসি, আাধ হি নয়ান তরঙ্গ।’ কিন্তু ‘ভালো করি পেখন না ভেল।’ তাহার পর কত আসা-যাওয়া, কত বলা-কওয়া, কত ছলে কত ভাব প্রকাশ, কত ভয়, কত ভাবনা— অবশেষে একদিন মধুর বসন্তে নবীন মিলন ; কিন্তু তাহাও নিবিড় নিগৃঢ় নিরতিশয় মিলন নহে। তাহার মধ্যে কত আশঙ্কা, কত আশ্বাস, কত কৌতুক, কত ছদ্মলীলা, কত মান-অভিমান সাধ্যসাধনা ! আবার সখীর সহিত পরামর্শ ; সখীকে ডাকিয়া গৃহকোণে নিভৃতে বসিয়া নানা ছলে এবং কথার কৌশলে আপনার মুখস্থতি লইয়া আলোচনা। নবীনার নবপ্রেম যেমন মুগ্ধ যেমন মিশ্রিত বিচিত্র কৌতুককৌতুহলপরিপূর্ণ হইয়া থাকে, ইহাতে তাহার কিছুই কম নাই। 8|| 6