পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য '8C: 이 কখনোই তাহ করেন না, তাহারা সময়ে-অসময়ে স্থানে-অস্থানে অনায়াসেই আত্মবিসর্জন করিয়া থাকেন, তথাপি মহাভারতের কবি বিনা চেষ্টায় কর্ণকে যে অমরলোকে প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিয়াছেন এই দীনেশ রমেশ গণেশ ধনেশ -বর্গ সমালোচকপ্রদত্ত সমস্ত ফাস্ট ক্লাস টিকিট এবং নৈতিক পাথেয় লইয়াও তাহার নিম্নতম সোপান পর্যন্ত পৌছিতে পারে কি না সন্দেহ। সেই কারণেই বলিতেছিলাম, প্রথম স্তরের মহাভারতকার কবি যদি কৃষ্ণকে দেবতা বলিয়া মানিতেন না ইহা সত্য হয়, তবে তিনি যে র্তাহাকে নীতিশিক্ষার অখণ্ড উদাহরণ-স্বরূপ গড়িয়াছিলেন ইহা আমাদের নিকট সম্ভবপর বোধ হয় না। বঙ্কিম মহাভারতের প্রথমস্তর-রচয়িতাকে শ্রেষ্ঠ কবি বলিয়া স্থির করিয়াছেন, অনেক স্থলে সেই শ্রেষ্ঠত্বের দোহাই দিয়া তিনি কৃষ্ণচরিত্র হইতে সমস্ত অসংগতি-অসম্পূর্ণতা বাদ দিয়াছেন। কিন্তু আমরা বলিতেছি, সেই শ্রেষ্ঠতার লক্ষণ যে সংগতি তাহী নহে। এ পর্যন্ত হ্যামলেট চরিত্রের সংগতি কেহ সন্তোষজনকরপে আবিষ্কার করিতে পারে নাই, "কিন্তু কাব্যজগতের মধ্যে হ্যামলেট যে একটি পরম স্বাভাবিক স্বষ্টি সে বিষয়ে কেহ সন্দেহ প্রকাশ করে নাই । অতএব, বঙ্কিম মহাভারতের কৃষ্ণচরিত্র হইতে সমস্ত মন্দ অংশ বাদ দিয়া যে আদিম মহাভারতকারের আদর্শ কৃষ্ণকেই আবিষ্কার করিয়াছেন, সে বিষয়ে আমাদের সম্পূর্ণ সন্দেহ আছে। এক্ষণে কথা এই যে, মহাভারতকারের আদশ না-ই হইল, বঙ্কিমের আদর্শ যদি যথার্থ মহৎ হয় তবে সেও বঙ্গীয় পাঠকদের পক্ষে পরম লাভ বলিতে হইবে। বঙ্কিমের আদর্শ যে মহৎ এবং ‘কৃষ্ণচরিত্র যে বঙ্গসাহিত্যের পরম লাভ সে বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নাই । কিন্তু সেইজন্যই 'কৃষ্ণচরিত্র পাঠ করিতে সর্বদাই মনে এই খেদ উপস্থিত হয় যে, সাহিত্যে যে প্রণালীতে অাদর্শের প্রতিষ্ঠা করিতে হয় বঙ্কিম সে প্রণালী অবলম্বন করেন নাই। ফুড যে বলিয়াছেন, মহৎ লোকের মাহাত্ম্য ইতিহাস যথার্থরূপে প্রকাশ করিতে পারে না, কাব্য পারে, সে কথা সত্য। কারণ, মাহাত্ম্য পদার্থটি পাঠকের মনে অখণ্ডভাবে সজীবভাবে সঞ্চার করিয়া দিবার জিনিস। তাহ তকদ্বারা যুক্তিদ্বার ক্রমশ খণ্ড খণ্ড আকারে মনের মধ্যে কিয়দংশে প্রমাণিত হইতে পারে, কিন্তু তর্কযুক্তি তাহাকে হৃদয়ের মধ্যে সর্বাংশে সঞ্চারিত করিয়া দিতে পারে না । বঙ্কিম গ্রন্থের প্রারম্ভ হইতেই তরবারি হস্তে সংগ্রাম করিতে করিতে অগ্রসর