পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8? রবীন্দ্র-রচনাবলী হইয়াছেন ; কোথাও শাস্তভাবে তাহার কৃষ্ণের সমগ্র মূর্তি আমাদের সম্মুখে একত্র ধরিবার অবসর পান নাই। --- সেজন্য র্তাহাকে দোষ দেওয়াও যায় না। কারণ, ভক্তসম্প্রদায়ের বাহিরে এমন-কি ভিতরেও, কৃষ্ণচরিত্র যেরূপ কৃষ্ণবর্ণে চিত্রিত ছিল তাহাতে প্রথমত সেই পূর্বসংস্কার ঘুচাইবার জন্য র্তাহাকে বিপুল প্রয়াস পাইতে হইয়াছে। যেখানে র্তাহার দেবপ্রতিমা প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে সেখানকার জঙ্গল সাফ করিবার জন্য র্তাহাকে কুঠার ধারণ করিতে হইয়াছিল। কৃষ্ণ সম্বন্ধে আমাদের সংস্কার এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রকৃত কৃষ্ণ যে অনেক বিভিন্ন বঙ্কিমের ‘কৃষ্ণচরিত্র’ হইতে তাহ আমরা শিক্ষা করিয়াছি। কিন্তু বঙ্কিম এই গ্রন্থে অনাবশ্ব্যক যে-সকল কলহের অবতারণা করিয়াছেন আমাদের নিকট তাহ অত্যন্ত পীড়াজনক বোধ হইয়াছে। কারণ, যে আদর্শ হৃদয়ে স্থির রাখিয়া বঙ্কিম এই গ্রন্থখানি রচনা করিয়াছেন, সেই আদশের দ্বারাই সমস্ত ভাষা এবং ভাব অনুপ্রাণিত হইয়া উঠিলে তবেই সে আদর্শের মর্যাদা রক্ষা হয়। বঙ্কিম যদি তুচ্ছ বিরোধ এবং অমুদার সমালোচনার অবতারণাপূর্বক চাঞ্চল্য প্রকাশ করেন তবে সেই চাঞ্চল্য র্তাহার আদর্শের নিত্য নির্বিকারতা দূর করিয়া ফেলে। অনেক ঝগড়া আছে যাহা সাপ্তাহিক পত্রের বাদপ্রতিবাদেই শোভা পায়, যাহা কোনো চিরস্মরণীয় চিরস্থায়ী গ্রন্থে স্থান পাইবার একেবারে অযোগ্য । পাশ্চাত্য মূখী অর্থাৎ যুরোপীয় পণ্ডিতগণের প্রতি লেখক অজস্র অবজ্ঞা বর্ষণ করিয়াছেন। প্রথমত সে-কাজটাই গহিত ; দ্বিতীয়ত এমন গ্রন্থে সেটা অত্যন্ত অশোভন হইয়াছে। মান্তজনের সমক্ষে অন্ত কাহারও প্রতি অযথা দুর্ব্যবহার কেবল দুর্ব্যবহার মাত্র নহে, তাহ মান্য ব্যক্তির প্রতিও অশিষ্টত । বঙ্কিম র্যাহাকে মানবপ্রেষ্ঠ বলিয়া জ্ঞান করেন, যিনি একাধারে ক্ষমা ও শৌর্যের আধার, যিনি সক্ষম হইয়াও অকারণে, এমন-কি, সকারণে অস্ত্র ধারণ করিতে অনেক সময়েই বিরত হইয়াছেন, তাহারই চরিত্র-প্রতিষ্ঠা-স্থলে তাহারই আদশের সম্মুখে উপবিষ্ট হইয়৷ মতভেদ-উপলক্ষে চপলতা প্রকাশ করা অাদর্শের অবমাননা । কেবল যুরোপীয় পণ্ডিতগণের প্রতি নহে সাধারণত যুরোপীয় জাতির প্রতিই লেখক স্থানে অস্থানে তীব্র বৈরিতা প্রকাশ করিয়াছেন। দুই-একটা দৃষ্টান্ত উদ্ধৃত করি। শিশুপালের গালি ‘শুনিয়া ক্ষমাগুণের পরমাধার পরম যোগী অাদর্শপুরুষ কোনো উত্তর করিলেন না। কৃষ্ণের এমন শক্তি ছিল যে তদণ্ডেই তিনি শিশুপালকে বিনষ্ট করিতে সক্ষম— পরবর্তী ঘটনায় পাঠক তাহ জানিবেন । কৃষ্ণও কখনও যে এরূপ