পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধুনিক সাহিত্য 8 a S প্রবেশ করিয়া সমস্ত লোকালয়দৃশুটিকে উজ্জ্বলতায় অঙ্কিত করিয়াছে। শ্ৰীশবাবু আমাদিগকে বাংলাদেশের যে-একটি পল্লীতে লইয়া গিয়াছেন সেখানে আমরা সকলের সকল খবর রাখিতে চাই, সকল লোকের সহিত আলাপ করিতে চাই, বিশ্রদ্ধভাবে সকল স্থানে প্রবেশ করিতে চাই, তদপেক্ষা গুরুতর কিছুই প্রত্যাশা করি না। আমরা অভ্ৰভেদী এমন একটা-কিছু ব্যাপার চাহি না যাহাতে আরসকলকেই তুচ্ছ করিয়া দেয়, যাহাতে একটি বিস্তীর্ণ শান্তিময় শু্যামল সমগ্রতাকে বিদীর্ণ ও খর্ব করিয়া ফেলে। এখানে সুশুনির মা এবং নিস্তারিণী, ফমুশেখ এবং নায়েব মহাশয় সকলেই আমাদের প্রতিবেশী— পরস্পরের মধ্যে ছোটোবড়ো ভেদ যতই থাক, তথাপি সকলেরই ঘরের কথা আমাদের জিজ্ঞাস্ত, প্রতিদিনের সংবাদ আমাদের আলোচ্য বিষয়। এরূপ উপন্যাস সুপরিচিত স্থানের ন্যায় আমাদের মনের পক্ষে অত্যন্ত বিরামদায়ক ; এখানে অপ্রত্যাশিত কিছু নাই, মনকে কিছুতে বিক্ষিপ্ত করিয়া দেয় না, প্রত্যেক পদক্ষেপে এক-একটা দুরূহ সমস্যা জাগ্রত হইয়া উঠে না, সৈৗন্দর্যরস এত সহজে সম্ভোগ করা যায় যে, তাহার জন্য কোনোরূপ কৃত্রিম মালমশলার আবিষ্ঠাক করে না । কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্যক্রমে গ্রন্থকার নিজের প্রতিভায় নিজে সন্তুষ্ট নহেন ; তিনি আপনাকে আপনি অতিক্রম করিতে চেষ্টা করেন। অরসিকদের চক্ষে যাহ। সহজ তাহা তুচ্ছ ; গ্রন্থকার ক্ষমতাশীল লেখক হইয়াও সেই অরসিকমণ্ডলীর নিকট প্রতিপত্তির প্রলোভনটুকু কাটাইতে পারেন নাই। তিনি হঠাৎ এক সময় আপন প্রতিভার স্বাভাবিক গতিকে বলপূর্বক প্রতিহত করিয়া তাহাকে অসাধারণ চরিত্র ও রোমহর্ষণ ঘটনাবলীর মধ্যে অসহায়ভাবে নিক্ষেপ করিয়াছেন। পরিচিত সহজ সৌন্দর্যের সহিত সুন্দরভাবে সহজে পরিচয় সাধন করাইয় দেওয়া অসামান্য ক্ষমতার কাজ ; বাংলার লেখকসম্প্রদায়ের মধ্যে শ্ৰীশবাবুর সেই অসামান্য ক্ষমতাটি আছে, কিন্তু তিনি তদপেক্ষা আরও অধিক ক্ষমতা প্রকাশ করিয়া পাঠককে চমৎকৃত করিতে চাহেন এবং সেই কাজ করিতে গিয়া নিজের প্রতিভার মধ্যে অনর্থক একটা আত্মবিরোধ বাধাইয়৷ বসেন। প্রতিভাবহির্গামী এই দুরাশায় তাহার প্রথম-রচিত উপন্যাস ‘শক্তিকাননে’র মাঝখানে দাবানল জালাইয়া ছারখার করিয়া দিয়াছে এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘ফুলজানি'রও একটি প্রান্তভাগে তাহার একটি শিখা আপন প্রলয়রসন বিস্তার করিয়াছে— সৌভাগ্যক্রমে সম্পূর্ণ গ্রাস করিতে পারে নাই। সার্বভৌম-মহাশয়ের মেয়েটির নাম কালী, তাহার স্বভাবটি যেমন মিষ্ট তেমনি দুষ্ট, তেমনি স্বাভাবিক ; গ্রন্থের নায়িক ফুলকুমারীর প্রতি তাহার যে স্বৰূঢ়